Thank you for trying Sticky AMP!!

আহসান এইচ মনসুর

লেনদেন ডিজিটাল হলে কালোটাকা কমবে

ডিজিটাল লেনদেন বাড়লে দেশের অর্থনীতি কী সুফল পায় তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

প্রশ্ন

নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ বা ক্যাশলেস সোসাইটি করা গেলে কী সুফল পাব? 

আহসান এইচ মনসুর: পুরোপুরিভাবে নগদ লেনদেনবিহীন সমাজে যেতে পারলে কালোটাকার লেনদেন অনেক কমে যাবে। কারণ, তখন কালোটাকা লুকানোর জায়গা থাকবে না। যেমন চীনে ডিজিটাল মুদ্রা (কারেন্সি) রয়েছে; ফলে সেখানে কার কাছে কী পরিমাণ অর্থ রয়েছে, রাষ্ট্র তা জানে। আমরা সে পর্যায়ে দ্রুত যেতে পারব না। আবার সরকারও হয়তো তা করতে চাইবে না। কারণ, এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে একটা মাঝামাঝি জায়গায় আমরা যেতে পারি। 

প্রশ্ন

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল ব্যবস্থায় আনতে চায় তারা। এটা সম্ভব কিনা? 

আহসান এইচ মনসুর: ডিজিটাল লেনদেনের যাত্রায় আমরা এখনো শুরুর পর্যায়ে রয়েছি। ডিজিটাল লেনদেনকারী কোম্পানিগুলো এখনো সেভাবে লাভজনক পর্যায়ে যেতে পারেনি। শুধু ‘ক্যাশ ইন’, ‘ক্যাশ আউট’ করে লাভজনক হওয়া যায় না। তবে এই খাতে ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য কোম্পানিগুলোর এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন বাড়লে তাদের মুনাফাও বাড়বে। বড় লেনদেন থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, মুদির দোকান, সেলুনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা পরিশোধের সুযোগ ও অভ্যস্ততা তৈরি করতে হবে। ইতিমধ্যে আমাদের কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। যেমন বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ১ লাখ কোটি টাকার ওপর ডিজিটাল লেনদেন হচ্ছে; যা দিন দিন বাড়ছে। এটা উৎসাহব্যঞ্জক। 

প্রশ্ন

ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে উন্নত দেশে চর্চা কেমন? বাংলাদেশের অবস্থান কোন পর্যায়ে?

আহসান এইচ মনসুর: উন্নত ও বাংলাদেশের সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে কেউ বেশি নগদ টাকা সঙ্গে নিয়ে বের হয় না। যেকোনো প্রয়োজনে তারা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে। আমাদেরও সে সুযোগ রয়েছে। আবার চীনে উইচ্যাট বা উইপের মতো ‘মোবাইল ওয়ালেট’ বেশি জনপ্রিয়। ভারতে ডিজিটাল লেনদেনের ধরন অনেকটা আমাদের মতোই। তবে পরিমাণের দিক থেকে তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। 

প্রশ্ন

নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ গঠনে বাধা আসলে কোথায়? 

আহসান এইচ মনসুর: দেশে এখন পর্যন্ত ক্যাশ আউটসাইড ব্যাংক (ব্যাংকের বাইরে টাকা) বাড়তির দিকে। অর্থাৎ মানুষের পকেটে, বালিশের নিচে, ব্যাংকের ভল্টে নগদ অর্থ রাখা আছে। তাহলে আমরা ক্যাশলেস হব কীভাবে। যত দিন পর্যন্ত ক্যাশ আউটসাইড ব্যাংকিং পদ্ধতি চলতে থাকবে, তত দিন পর্যন্ত এগিয়েছি বলা যাবে না। বলতে পারি, আংশিক ক্যাশলেস হয়েছে। অন্যদিকে দেশে ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহক বাড়ানো বলতে আমরা শুধু ব্যক্তিকে বুঝি। কিন্তু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। ‘বিজনেস টু বিজনেস’ যে লেনদেন হয়, তার পরিমাণ অনেক বড়। এ দিক থেকে চীন-ভারতের কোম্পানিগুলো অনেক এগিয়ে রয়েছে। 

প্রশ্ন

ডিজিটাল লেনদেনে মাশুল বেশি বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এটা কি ঠিক?

আহসান এইচ মনসুর: ডিজিটাল লেনদেনের মাশুল নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে আমার কাছে এই বিতর্ককে যৌক্তিক মনে হয় না। যেমন এমএফএসে ডিজিটাল লেনদেনের অন্তত চার ধরনের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাশুল ভাগ করে নেয়। ফলে এখানে মাশুল কমানোর খুব একটা সুযোগ দেখি না। আমি বরং মনে করি পুরো সিস্টেম ডিজিটাল করা গেলে গ্রাহকের খরচ কমে যাবে। তখন আর টাকা বের (ক্যাশ আউট) করতে হবে না। এ জন্য ডিজিটাল ওয়ালেট পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করা প্রয়োজন। 

প্রশ্ন

ডিজিটাল ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধের ঝুঁকি বাড়ছে। এ নিয়ে করণীয় কী? 

আহসান এইচ মনসুর: এটা একটা বড় বিষয়। আমরা গবেষণা করে দেখেছি, ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। তবে এটাও ঠিক, নিজেদের অজ্ঞতার কারণে গ্রাহকেরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিকাশ-নগদ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরি হয়েছে, এমনটা কখনো শোনা যায়নি। দেশে বেশির ভাগ প্রতারণা হয় গ্রাহকের অজ্ঞতার কারণে। এ জন্য গ্রাহককে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও সচেতন করা জরুরি। কোম্পানিগুলোকেও নিজেদের নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।