Thank you for trying Sticky AMP!!

এমডি নিয়োগ, নইলে প্রশাসক

প্রায় তিন মাস ধরে এমডি ছাড়াই চলছে ব্যাংকটি। আগামী বুধবারের মধ্যে একজন স্থায়ী এমডি নিয়োগ দেওয়ার জন্য ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রায় তিন মাস ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছাড়াই চলছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড বা এনবিএল। সম্প্রতি অনুমোদন ছাড়া ঋণ বিতরণসহ নানা অনিয়মের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে ব্যাংকটি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বুধবারের মধ্যে একজন স্থায়ী এমডি নিয়োগ দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত সোমবার ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদারের কাছে এ চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৮ এপ্রিলের মধ্যে এমডি নিয়োগ না দিলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫–ক ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫–ক ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের এমডি পদ একাধারে তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে এমডি পদ পূরণ না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে, যিনি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে আগামী বুধবারের মধ্যে এমডি নিয়োগ না দিলে ব্যাংকটিতে প্রশাসক দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনে বলা আছে, তিন মাসের বেশি এমডি পদ শূন্য রাখা যাবে না। রাখলে আমরা প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারব। ব্যাংকটিকে তা স্মরণ রেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

আইনে বলা আছে, তিন মাসের বেশি এমডি পদ শূন্য রাখা যাবে না। রাখলে আমরা প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারব।
সিরাজুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা যায়, এমডি হিসেবে চৌধুরী মোসতাক আহমেদের মেয়াদ গত ২৮ জানুয়ারি শেষ হয়। এরপর অতিরিক্ত এমডি এ এস এম বুলবুলকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর সময়েই ব্যাংকটিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। আবার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের সব ধরনের নথিপত্রে তাঁর প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীকালে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এ এস এম বুলবুলের মেয়াদ এক মাস বাড়ানো হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদারের কাছে পাঠানো চিঠিতে ৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এ এস এম বুলবুলকে এমডির (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের ৪.১ (চ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত নির্দেশনার পরিপন্থী। এ অবস্থায় বুলবুলকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের এমডির (চলতি দায়িত্বে) দায়িত্ব পালন থেকে অবিলম্বে বিরত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই নির্দেশের পর এ এস এম বুলবুলকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ সৈয়দ আবদুল বারীকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয় ব্যাংকটির পর্ষদ। এরপর থেকে এ এস এম বুলবুল আর ব্যাংকে আসছেন না। ২৮ এপ্রিল ব্যাংকটির স্থায়ী এমডি পদ শূন্য থাকার তিন মাস পূর্ণ হবে।

Also Read: সিকদার পরিবারে গৃহবিবাদ, ঋণের নথিও মিলছে না

Also Read: ‘এভাবে ব্যাংক চলতে পারে না, তা দেখিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে’

তবে দীর্ঘদিন স্থায়ী এমডি শুন্য থাকার ঘটনা বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকে এটাই প্রথম নয়। এর আগে ছয় মাসও এমডির পদ শূন্য ছিল ব্যাংকটির। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে এবার হঠাৎ করেই যেন নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকটির বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যাওয়ার পর এখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। আর ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে আছেন তাঁর মেয়ে পারভীন হক সিকদার, ছেলে রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার। এ ছাড়া সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন গণমাধ্যমে কর্মরত নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া ও সাবেক কর্মকর্তা বদিউল আলম স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এর বাইরে পরিচালক রয়েছেন কেডিএস গ্রুপের খলিলুর রহমান, হোসাফ গ্রুপের মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাবরুর হোসেন এবং ব্যবসায়ী জাকারিয়া তাহের।

Also Read: ন্যাশনাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিকদার পরিবারে বিভক্তি

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করেও চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক। এ ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আমানত ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সারা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও ছড়িয়ে রয়েছে ব্যাংকটির সেবা। এ কারণে দেশের ব্যাংক খাতে ন্যাশনাল ব্যাংকের যেকোনো ঘটনা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ, এর প্রভাব পড়ে পুরো ব্যাংক খাতে।

Also Read: সমস্যা সমাধানে এবার পর্ষদ সভা ডেকেছে ন্যাশনাল ব্যাংক