অভিমত

জাল কাগজপত্র উপস্থাপন করছেন ব্যাংকাররাই

নাজমুল এইচ পলাশ
নাজমুল এইচ পলাশ

ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপিদের এত সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ তেমন কমছে না—এ বড় আফসোসের বিষয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের স্থিতি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশই খেলাপি।

আগের প্রান্তিকে খেলাপি ছিল ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে মাত্র শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ বা ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। তবে, এই পরিসংখ্যান কতটা সঠিক, তা নিয়েও অনেকের আশঙ্কা রয়েছে।

আশঙ্কার কারণও অমূলক নয়। তিন মাস পরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের তথ্য নিয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করে, তা করা হয় ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। কিন্তু আমরা কম-বেশি সবাই জানি যে ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। এমনিতেও অনুমেয় যে খেলাপি ঋণ বাস্তবে বেশি।

কোভিড-১৯-এর কারণে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন করে ঋণ খেলাপি দেখানো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এই ফাঁকে ২ শতাংশ বিশেষ সুবিধায় খেলাপি ঋণ নবায়ন করারও সুযোগ দেওয়া হয়েছে ঋণখেলাপিদের। নতুন করে কাউকে খেলাপি ঘোষণা না করার পরোক্ষ নির্দেশনাও রয়েছে বলে শোনা যায়।

প্রশ্ন আসতে পারে, এত বেশি ঋণ খেলাপি হলো কী করে? ব্যাংক খাতের মতো এত সুগঠিত একটি খাত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো এত বড় একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা সত্ত্বেও তা কী করে সম্ভব হলো? অনেক গবেষণাতেই উঠে আসে যে ঋণ দেওয়ায় প্রক্রিয়াগত ত্রুটি একটা বড় বিষয়। এখানে দায়টি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। জাল কাগজপত্র পর্ষদে উপস্থাপিত করছেন ব্যাংকাররাই। চাপ থাকবেই। এ চাপ সামলানোর কৌশলও তাদেরই ঠিক করতে হবে। এ-ও ঠিক, পর্ষদ সদস্যদের অনেকেই এগুলো পরীক্ষা করার ফুরসত পান না। অনেক পর্ষদ সদস্যের যোগ্যতারও ঘাটতি আছে। যা হয়েছে, তা উদ্ধারের চেষ্টা তো করতেই হবে, খেলাপি ঋণ নতুন করে যাতে না বাড়ে, সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। এ জন্য দরকার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।