Thank you for trying Sticky AMP!!

মানুষ সঞ্চয় করেছে বেশি, ব্যাংকে বেড়েছে আমানত

  • বিদায়ী ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকগুলোয় আমানত বেড়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে ঋণ বিতরণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

  • করোনার কারণে খরচ কমছে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার চিন্তায় টাকা জমানো বাড়ছে।

  • ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ চালু হওয়ায় ইতিবাচক প্রভাব।

বিদায়ী ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে দেশের ব্যাংকগুলোয় আমানত বেড়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ সময় গ্রাহকেরা আগের চেয়ে সঞ্চয়ও বেশি করেছেন। সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানত বেড়েছে ৬৩ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা। ঋণের বড় অংশই গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চলতি মূলধন খাতে। মূলত সুদের হার কম হওয়ায় প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণই বেশি নিয়েছেন গ্রাহকেরা।

ব্যাংকাররা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে সবাই খরচ কমিয়েছেন। আবার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে ব্যাংকে টাকা জমানো বাড়িয়েছেন। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ চালু করায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ আমানত বেড়েছে।

করোনায় সবাই সচেতন হয়ে গেছে। খরচ নেই, বিনিয়োগও প্রায় বন্ধ। এ জন্য ব্যাংকে আমানত বেড়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাই বিনিয়োগের বিষয়ে সবাই খুব সতর্ক।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এমডি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির আমানত রাখা বেড়েছে। এই সময়ে বাণিজ্যিক ঋণের পাশাপাশি ভোক্তাঋণও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় সবাই সচেতন হয়ে গেছে। খরচ নেই, বিনিয়োগও প্রায় বন্ধ। এ জন্য ব্যাংকে আমানত বেড়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাই বিনিয়োগের বিষয়ে সবাই খুব সতর্ক।

আমানত পরিস্থিতি

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোয় মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১২ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর ৯ মাসে আমানত বেড়েছে ৯৮ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা।

একই সময়ে ব্যাংকগুলোতে সরকারের আমানত ৭৭ হাজার ৫৯ কোটি থেকে মাত্র ৩ হাজার ২১৩ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। তিন মাস আগে গত জুনে তা ছিল ৮৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত তুলে নিয়ে সরকারি তহবিলে জমা দেওয়ার কারণে তাদের আমানতে কিছুটা কমেছে।

এদিকে করোনোভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে বেসরকারি আমানতে কিছুটা ধাক্কা লাগলেও পরে তা হু হু করে বাড়ে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আমানত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।

ঋণ পরিস্থিতি

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৬২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ৯ মাসে ঋণ বেড়েছে ৫৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা।
এ সময় দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ঋণ বাড়লেও বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণ কমেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিদেশি ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা, যা গত সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। তবে এ সময় ঋণে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে। ৯ মাসে ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঋণ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা।

এ সময় খাত ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ভোক্তা ঋণে। ৯ মাসে ভোক্তা ঋণ ৭০ হাজার ৯৭০ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৭২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেওয়া ঋণ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। চলতি মূলধন ঋণ ২ লাখ ১৮ হাজার ৬ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। তবে ঋণ কমেছে কৃষি, মৎস্য ও বনায়ন খাতে। একইভাবে মেয়াদি ঋণও কমেছে। আর বিভাগ বিবেচনায় ৯ মাসে ঋণে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে চট্টগ্রাম ও খুলনায়।

২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে কারেন্ট হিসাব ও বিশেষ নোটিশ হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বেড়েছে। তবে এ সময় মানুষ সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানত রাখাটাও বাড়িয়েছে। অনেকে করোনার কারণে খরচ কমিয়ে নতুন করে সঞ্চয় শুরু করেছেন। এ সময়ে সঞ্চয়ী আমানত ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬১২ কোটি টাকায় উঠেছে। স্থায়ী আমানত ৫ লাখ ৭৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৪০৮ কোটা টাকা। এ সময়ে প্রবাসীদের বিদেশি মুদ্রায় জমার পরিমাণ ১৬ হাজার ৩৩০ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা।

তবে প্রবাসীদের দেশীয় মুদ্রায় জমার পরিমাণ ৩ হাজার ৮২২ কোটি থেকে কমে ২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকায় নেমেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, দেশে ফেরত আসা প্রবাসী শ্রমিকেরা টাকা তুলেছেন। আবার অনেকে টাকা পাঠাতে না পারায় আত্মীয়স্বজন টাকা তুলে নিয়েছেন। এতে প্রবাসীদের স্থানীয় মুদ্রায় জমা কমেছে।