Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা উঠবে ধীরে ধীরে

গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। আর একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। এর আগে নভেম্বরে আমানত তিন হাজার কোটি টাকা কমে গিয়েছিল।

ব্যাংক

ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ার শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি থেকে ঋণ পেতে বাংলাদেশও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে ঋণের পুরো মেয়াদে সুদহারের আরোপিত সীমা তুলে নেওয়া হবে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে আমানত ও সুদহার স্থিতিশীল রাখতে একটা করিডর–ব্যবস্থা চালু করা হবে। যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুদহারের সীমা নির্ধারিত হবে।

সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনই শিল্প খাতের ব্যাংকঋণের সুদহারের ৯ শতাংশ সীমা তুলে নেওয়া হবে না। ভোক্তাঋণের সুদহার ইতিমধ্যে ১২ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ–সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি।

Also Read: ১২ মাসে যেসব শর্ত মানতে হবে

এদিকে অর্থনৈতিক সংকট ও কয়েকটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের অনিয়মের কারণে ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। গত ডিসেম্বর শেষে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই সময়ে ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভোক্তাঋণের সুদহার ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অন্য ঋণের সীমা তুলে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতির উন্নতি হলে তখন এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

Also Read: ডলারের এক দাম, কমবে খেলাপি ঋণ

ব্যবসায়ীদের চাপে ও সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়। এরপর ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও কমিয়ে দেয়। ২০২০ সালের এপ্রিলের আগে শিল্পঋণে সুদহার ১৬ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। একই সময়ে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় বিনিয়োগও স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে সুদহার কমানোর পর ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। তবে করোনার জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার পর ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বাড়তে থাকে।

আমানতের তুলনায় ঋণ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী নগদ অর্থ সংরক্ষণ বা সিআরআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। আর শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অনিয়মের তথ্য আমানতকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দেয়। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিতে তিন ধরনের ব্যবস্থা চালু করেছে। প্রথমে সুকুক বন্ড জমা রেখে, এরপর কোনো বন্ড ছাড়া ও সর্বশেষ প্রবাসী আয় ও প্রণোদনার ঋণে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি বন্ধক রেখে।

Also Read: ঋণ কেলেঙ্কারিমুক্ত ব্যাংক খাত কীভাবে

এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেওয়াসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের শর্ত দিয়ে আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ পেয়েছে। প্রথম কিস্তি ছাড়ের পর ঋণের নানা শর্ত ও বাংলাদেশের দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে আইএমএফ। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এসব প্রতিশ্রুতি দেন।

আইএমএফকে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা ও পূর্বাভাস জানতে জুলাইয়ের মধ্যে একটা করিডর–ব্যবস্থা চালু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে আমানত ও ঋণের সুদহার স্থিতিশীল থাকে। আর ঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ঋণের পুরো মেয়াদে সব ঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, তারল্য ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ বাজার–নীতিবিরোধী। সংকটে পড়া কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তারল্যসহায়তা দিয়ে বেশি দিন টেকানো যাবে না। এ জন্য সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি অনিয়মে জড়িয়ে পড়া ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন করতে হবে। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

Also Read: সুদহার বাড়াচ্ছে ডলার–সংকট  

এদিকে গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, নভেম্বরে যা ছিল ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ ৪১ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, নভেম্বরে ঋণ ছিল ১৪ লাখ ১৮ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে আমানত বেড়েছে ২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। আর একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। এর আগে নভেম্বরে আমানত তিন হাজার কোটি টাকা কমে গিয়েছিল।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক খাতে তারল্যের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার বড় কারণ সুদহারের সীমা বেঁধে রাখা। এ ছাড়া অনিয়মে জড়িয়ে পড়া ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবার ঋণের সুদহার কম থাকায় ডলার–সংকটও মিটছে না। এ জন্য সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া এখন অন্যতম সমাধান। সুদ নির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমলারা। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ফিরিয়ে দিতে হবে। যাতে অর্থনৈতিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত হয়।