Thank you for trying Sticky AMP!!

এ কে এন আহমেদ স্মারক বক্তৃতায় মূল বক্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (ডানে)। পাশে অনুষ্ঠানের সভাপতি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে

প্রবাসী আয়ের প্রণোদনার বড় অংশ যাচ্ছে রাঘববোয়ালদের পেটে

গতকাল সন্ধ্যায় মিরপুরে বিআইবিএমে এ কে এন আহমেদ স্মারক বক্তৃতায় মূল বক্তা ছিলেন সাবেক এই গভর্নর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, সরকার প্রবাসী আয়ে যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তার বড় অংশ রাঘববোয়াল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের পেটে যাচ্ছে। তারা প্রণোদনার কিছু অংশ প্রবাসী আয় যারা পাঠাচ্ছে তাদের দিচ্ছে, বাকিটা নিজেরা নিয়ে চোরাই পথে আনছে। এ জন্য যে পরিমাণে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল, সে পরিমাণে বাড়েনি।

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত তৃতীয় এ কে এন আহমেদ স্মারক বক্তৃতায় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন। তিনি এবারের স্মারক বক্তৃতায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাতসহ অর্থনীতির সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

পরে অনুষ্ঠানের সভাপতি বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার তাঁর বক্তব্যে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। আর উপস্থিত ছিলেন সাবেক গভর্নর ফজলে কবির। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘ডলার কিনে মানুষ বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে। আমরা ব্যাংকে ডলার জমা রাখার প্রক্রিয়া সহজ করে দেওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে নগদ পাঁচ লাখ ডলার জমা হচ্ছে। এতে করে রিজার্ভ বাড়ছে। ব্যাংক কিন্তু কোনো প্রশ্ন করছে না। আবার বিদেশ থেকে আসার সময় কেউ যদি ঘোষণা দেয় আমি ডলার নিয়ে এসেছি, কেউ প্রশ্ন করবে না। সেই ডলার ব্যাংকে আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট) হিসাবে জমা রাখা যাবে।’

মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে আর একাধিক মুদ্রা বিনিময় হার রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। একটা একক বিনিময় হার করা উচিত। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে যে প্রণোদনা দেওয়া হয়, সেটিকে একক বিনিময় হারের মধ্যে সংযুক্ত করে ফেলতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

জবাবে বর্তমান গভর্নর সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এক বছর আগেও রপ্তানি, আমদানি ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের আলাদা দাম ছিল। এখন সেটি নেই। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসছে। অন্য সূচকগুলোও ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। এটি বজায় থাকবে।

ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটি কার্যকর হচ্ছে না। বাড়তি দামে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে।

আমরা ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আছি

ফরাসউদ্দিনের মতে, বর্তমানে দেশে ত্রিশঙ্কু অবস্থা বিরাজ করছে। মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, মুদ্রা বিনিময় হার এবং ব্যাংকের সুদহার অনেক ওঠানামা করছে। এই তিন বিষয়কে স্থিতিশীল রেখে স্থানীয় মুদ্রার মান ধরে রাখাই মুদ্রানীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। চিত্তাকর্ষক দারিদ্র্য নির্মূলের সফলতা সত্ত্বেও দেশে বর্তমানে তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলে এসব মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের বেশি হলে তা গরিব মানুষের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে টাকার সরবরাহ কমাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতি একসঙ্গে প্রয়োগ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের অনেক খরচ কমানো হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, সরকারি খরচ কমানোর ফলে চলতি বাজেটের খরচ ১৫ শতাংশ কম হবে।’

মধ্যস্বত্বভোগীরা যন্ত্রণার কারণ

ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশে মধ্যস্বত্বভোগীরা এখন যন্ত্রণার কারণ হয়েছে। তাদের কারণে সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলোর সুবিধা ভোক্তারা পান না। সরকার আমদানি করা পণ্যের শুল্ক কমানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার সুবিধা বিক্রেতারা পেয়েছে; ক্রেতারা পায়নি। ১৯৭৪ সালেও এই মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তাই মধ্যস্বত্বভোগীদের তাদের অস্ত্র দিয়েই ঘায়েল করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক নীতির সঙ্গে সরকারের অন্যান্য নীতির সমন্বয় করতে হবে।

বিনা বাধায় টাকা জমার সুযোগ

বর্তমানে ব্যাংক খাতে চলমান তারল্যসংকট কাটাতে ব্যাংকে বিনা বাধায় টাকা জমার সুযোগ করে দেওয়ার পরামর্শ দেন ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, যেহেতু টাকার সমস্যা রয়েছে, এ জন্য ব্যাংকে বিনা বাধায় টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া অর্থনৈতিক বিষয়ে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা অত্যন্ত মূল্যবান ও জরুরি বলেও মত দেন তিনি। তাঁর মতে, স্বাধীনতার পর থেকে বৈদেশিক মুদ্রার দায়দেনা ঠিকভাবে পরিশোধের যে সুনাম তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হলে তথ্য–উপাত্ত যথার্থ হওয়া জরুরি।

সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘সরকার সাধারণত দেশের মুদ্রাকে শক্তিশালী দেখাতে চায়। গত এক দশকে ভারত তাদের মুদ্রার ৭৭ শতাংশ অবমূল্যায়িত করেছে। আর এ সময়ে আমরা করেছি ২৮ শতাংশ। ফলে মুদ্রার অবমূল্যায়ন দীর্ঘ সময়ের বকেয়া হয়ে গেছে। এ কারণে দেড় বছর আগে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার জোর করে টাকাকে অনেক বেশি অবমূল্যায়িত করে দিয়েছে।’