Thank you for trying Sticky AMP!!

চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের নীতিমালা হচ্ছে

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৈরি খসড়ায় বলা হয়েছে, ছয় সদস্যের বাছাই কমিটি রাষ্ট্র খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ সদস্য নিয়োগ দেবে।

ব্যাংক

রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে কারা নিয়োগ পাবেন, তা নিয়ে এত দিন কোনো নীতিমালা ছিল না। এই সুযোগে সব সরকারের সময়েই দলীয় লোক কিংবা পছন্দের পেশাজীবীদের সেখানে বসানো হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যম সারির নেতাদের নিয়োগ দিয়ে অনেক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে। ১৩ বছর পর এ ব্যাপারে এই সরকার এখন নড়েচড়ে বসছে। সে অনুযায়ী রাষ্ট্র খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিয়োগ দিতে প্রথমবারের মতো একটি নীতিমালা করছে। ইতিমধ্যে নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

সচিবালয়ে গতকাল রোববার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সভাপতিত্বে ওই খসড়ার ওপর পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক এবং বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিয়োগ দেওয়া হবে একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে। বৈঠক সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।

সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক, জনতা ব্যাংকের বিছমিল্লাহ ও অ্যাননটেক্স, অগ্রণী ব্যাংকের মুন গ্রুপ, রূপালী ব্যাংকের গোল্ড আনোয়ার এবং বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য দলীয় লোকজনের সমন্বয়ে গঠিত পর্ষদগুলোকে দায়ী করা হয়। কারণ, পর্ষদ সদস্যদের অর্থনীতি, ব্যাংকিং, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানের ঘাটতি ছিল। এসব বিষয় নিয়ে গতকালের বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

ব্যাংকগুলোর পর্ষদে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা শেখ আবদুল হাই বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা জান্নাত আরা, নাগিবুল ইসলাম, সাইমুম সরওয়ার কমল ও মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা খোন্দকার জাহাঙ্গীর কবির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, সুভাষ সিংহ রায়, শাহজাদা মহিউদ্দিন, জাকির আহমেদ, আবদুস সবুর প্রমুখ ব্যক্তিকে ২০০৯ সালে একবার এবং কাউকে কাউকে ২০১২ সালে দ্বিতীয়বার বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান/পরিচালক নিয়োগ’ শীর্ষক খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ও পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে। বেসরকারি ব্যাংকে সরকার যেমন পরিচালক নিয়োগ দিয়ে থাকে, তেমনি রাষ্ট্র খাতের প্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। পরিচালনা পর্ষদে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, আর্থিক বাজার, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও ব্যবসায় শিক্ষা, শিল্প ও আইন বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিয়োগ পাবেন।

এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ও নিরীক্ষা বোঝার জন্য সনদপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক এবং আইনি বিষয় বোঝার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে নীতিমালায়। পর্ষদে অন্তত একজন নারী অগ্রাধিকারভিত্তিতে রাখা হবে।

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যানদের নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর এবং পরিচালকদের নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ দিতে অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টার অনুমোদন লাগবে। ১০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা না থাকলে কেউই চেয়ারম্যান বা পরিচালক হতে পারবেন না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করছে ভালো কথা। ধরে নিলাম নেতাদেরও আর নেওয়া হবে না। আমলা ও শিক্ষকেরাও কি ভালো করছেন? দেখতে হবে দক্ষতা ও নির্মোহভাবে কাজ করতে পারবেন কারা। দলমত কারও ভিন্ন থাকতেই পারে, তা যেন পর্ষদ সিদ্ধান্তে প্রভাব না ফেলে—এটা নিশ্চিত করতে হবে।’