Thank you for trying Sticky AMP!!

জনতা ব্যাংকে দুই গোষ্ঠীর ঋণ নিয়মিত, খেলাপি ঋণ কমল সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা

তিন মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির প্রায় সব সূচকে উন্নতি ঘটেছে।

জনতা ব্যাংক

রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের বড় দুই খেলাপি শিল্পগোষ্ঠী তাদের ঋণ নিয়মিত করেছে। এতেই তিন মাসের ব্যবধানে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশ থেকে কমে ১৮ শতাংশে নেমেছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ কমেছে ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তাতে ব্যাংকের প্রায় সব সূচকে উন্নতি ঘটেছে।

ঋণ নিয়মিত করা বড় দুই শিল্পগোষ্ঠী হলো বেক্সিমকো গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গ্রুপ দুটি তাদের প্রায় ১৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে।

জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নথিপত্র এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্য নথিপত্র ও হিসাব পর্যালোচনায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকটির কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে জনতা ব্যাংক এখনো সবচেয়ে বেশি ঋণখেলাপি রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোর পুরোভাগেই অবস্থান করছে। 

রাষ্ট্র খাতের এই ব্যাংকটি একসময় ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল। উদ্যোক্তাদেরও অর্থায়নের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল এই ব্যাংক। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে জনতা ব্যাংককে। এর ধারেকাছেও নেই ব্যাংকটি। এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠন করা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেওয়া ডলারের ঋণ ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি। ফলে জনতা ব্যাংকের গ্রাহকদের ইডিএফ সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত প্রভাবশালী এক শিল্প গ্রুপের কারণে ব্যাংকটি নাজুক এই পরিস্থিতিতে পড়েছে। 

খেলাপি ঋণ কমল যেভাবে

জনতা ব্যাংকের নিজস্ব নথিপত্র অনুযায়ী, গত এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। ফলে জুন মাসের শেষে ব্যাংকটির খোলাপি ঋণ বেড়ে হয় ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে যা ছিল ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। তবে গত সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংকর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে হয়েছে ১৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অভিযোগ রয়েছে, খেলাপি ঋণের বড় অংশই অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া।

কিছু করপোরেট গ্রাহকের ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। আমরা যোগাযোগ রাখছি, যাতে এসব ঋণ আবার খেলাপি হয়ে না পড়ে। 
আবদুল জব্বার, এমডি, জনতা ব্যাংক

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়। এই সময়ে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের পুনঃ তফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। তবে আরও কিছু নতুন প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপির তালিকায় যোগ হওয়ায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। 

জানা গেছে, গত জুন শেষে জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ছিল ২৩ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ও এস আলম গ্রুপের ঋণ ছিল ৯ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, কিছু করপোরেট গ্রাহকের ঋণ নিয়মিত করা হয়েছে। আমরা যোগাযোগ রাখছি, যাতে এসব ঋণ আবার খেলাপি হয়ে না পড়ে। ফলে ব্যাংকের বিভিন্ন সূচকের উন্নতি ঘটেছে। ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো করতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

অন্য সূচকেও উন্নতি

গত জুনে জনতা ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ গত জুনে ছিল ৯৪ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৯৫ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। ফলে আমানতের তুলনায় ঋণ বেড়েছে কম।

ব্যাংকটি এই তিন মাসে আমানতের গ্রাহক বাড়িয়েছে, কমিয়েছে ঋণের গ্রাহক। মূলত ছোট গ্রাহকেরা একবারে ঋণ শোধ করে দেওয়ায় ঋণের গ্রাহক কমে গেছে। জনতা ব্যাংকে জুনে আমানত গ্রাহক ছিল ৮৮ লাখ ৩৭ হাজার ২২টি, সেপ্টেম্বরে যা বেড়ে হয় ৯১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৩টি। আর আলোচ্য সময়ে ঋণগ্রাহক ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৯ থেকে কমে হয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩৭টি।

গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে ১২৫ কোটি টাকা আদায় করেছিল, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১৬১ কোটি টাকা। পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণ থেকে নগদ আদায় ২৭ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব বড় গ্রাহক ইতিমধ্যে সীমার বেশি ঋণ নিয়েছে, তাদের আর নতুন করে ঋণ দেওয়া হবে না। তবে আগে নেওয়া ঋণের অর্থ পরিশোধ করলে তার সমপরিমাণ ঋণ নিতে পারবে। ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্ত মেনে কয়েকজন গ্রাহক ঋণ নিয়েছে। তাতে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।