Thank you for trying Sticky AMP!!

উল্টো বেড়েছে চিনির দাম

সরকার শুল্ক-কর কমানো হবে বলার পর দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু শুল্ক হার ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী না কমায় এখন চিনির দাম বাড়ছে।

চিনি

পবিত্র রমজানের আগে চিনি আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো হবে, এমন সংবাদে বাজারে পণ্যটির দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু শুল্ক হার ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি। নতুন শুল্কায়ন পদ্ধতিতে প্রতি কেজি চিনি আমদানিতে শুল্ক কমেছে ৬৮ পয়সার মতো। তাতে পণ্যটির দাম না কমে বরং উল্টো এখন বাড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুল্ক-কর যে হারে কমানো হয়েছে, তা বাজারে প্রভাব পড়ার মতো নয়।

মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, রোজার আগে চিনির চাহিদা বাড়ে। তাতে দামও একটু বাড়তি হয়। অন্যান্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও চড়া দাম দেখা যাচ্ছে। রোজার আগে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা তোড়জোড়েও বাজারে সেভাবে প্রভাব পড়ছে না।

সরকারের চেষ্টার সুফল পেতে সময় লাগবে। বাজার যদি আর বেশি ঊর্ধ্বমুখী না হয়, তাতেই বরং ক্রেতাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। তবে সরকার যদি এভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখে, তাহলে কয়েক মাস পরে বাজারে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে।
গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের শেষে তাঁরা প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) খোলা চিনি মানভেদে ৬ হাজার ৬০০ থেকে ৬ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। গতকাল প্রতি বস্তা চিনির দাম ছিল ৬ হাজার ৮০০ টাকা। দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে কেজিপ্রতি চিনির দাম সর্বোচ্চ ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে।

কারওয়ান বাজারের রব স্টোরের বিক্রেতা নাঈম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, দুই-তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চিনির দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে।

Also Read: সরকারি লাল চিনির দাম বাড়ানোর কয়েক ঘণ্টা পর সিদ্ধান্ত বাতিল

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত সপ্তাহের শুরুতেও খুচরায় প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল খুচরা বাজারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

দেশে বছরে ২০-২২ লাখ টন চিনি আমদানি হয়। আর লাল চিনি উৎপাদিত হয় মাত্র ৩০ হাজার টনের মতো। অর্থাৎ চিনির বাজার প্রায় পুরোপুরি আমদানি করা সাদা চিনির ওপরই নির্ভরশীল।

অন্যদিকে বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ বেশ নিয়ন্ত্রিত। তাতে খুচরায় কোথাও কোথাও ১৫০ টাকার ওপরেও এক কেজির প্যাকেটজাত চিনি কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

তবে এখন পর্যন্ত বাজারে চিনি সরবরাহে বড় কোনো সংকট দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ বলছেন, ভারত থেকে চোরাই পথে চিনি আসার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকার বাজারগুলোতে পণ্যটির সরবরাহ বেড়েছে। ওই সব বাজারে চিনির দামও রাজধানীর তুলনায় কিছুটা কম। এর ফলে নেত্রকোনা ও সিলেটের মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে চিনি কম কিনছেন। এমনটাই দাবি মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের।

Also Read: দেশে তেল-চিনির দাম যে কারণে বাড়ছে

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো প্রথম আলোকে বলেন, চিনিতে শুল্ক কমেছে ৫০ পয়সার মতো। এতে বাজারে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। কেজিপ্রতি অন্তত ৫ টাকা শুল্ক-কর কমানো হলে বাজারে প্রভাব দেখা যেত। পার্শ্ববর্তী দেশে চিনির দাম কম থাকায় বাজারে অবৈধভাবে প্রচুর চিনি প্রবেশ করছে বলে জানান তিনি।

সরকারের চেষ্টার সুফল পেতে সময় লাগবে। বাজার যদি আর বেশি ঊর্ধ্বমুখী না হয়, তাতেই বরং ক্রেতাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। তবে সরকার যদি এভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখে, তাহলে কয়েক মাস পরে বাজারে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান

লাল চিনির বাজারে বিতর্ক

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সরকারি মিলের প্যাকেটজাত লাল চিনির দাম কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৬০ টাকা করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। সরকার শুল্ক কমিয়ে যখন চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ঠিক এ রকম সময়েই কিনা সরকারি প্রতিষ্ঠানটি চিনির দাম নির্ধারণ করেছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কয়েক ঘণ্টা পরই শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চিনির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বিএসএফআইসি।

স্থানীয় চিনিশিল্পের সুরক্ষায় বিদেশ থেকে আমদানি করা চিনিতে সরকার উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। এরপরও স্থানীয়ভাবে বিএসএফআইসির উৎপাদিত লাল চিনির উৎপাদন মোট চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ। দেশে বছরে ২০-২২ লাখ টন চিনি আমদানি হয়। আর লাল চিনি উৎপাদিত হয় মাত্র ৩০ হাজার টনের মতো। অর্থাৎ চিনির বাজার প্রায় পুরোপুরি আমদানি করা সাদা চিনির ওপরই নির্ভরশীল।

বাজার পরিস্থিতি

এদিকে ভারত সরকার বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দিলেও বাজারে এটির দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। পবিত্র শবে বরাতের আগে মাংসের বাজারও এখন চড়া রয়েছে। ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি দাম পড়ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা। কোথাও কোথাও ২২০ টাকাও দাম চাওয়া হচ্ছে। গরুর মাংস অধিকাংশ দোকানেই ৭৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাছের মধ্যে চাষের রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২৫০ টাকা কেজি। ছোলা ও খেজুরের দাম এবার রোজার বেশ আগেভাগেই বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে ভোক্তাদের জন্য বড় কোনো স্বস্তি নেই।

জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের চেষ্টার সুফল পেতে সময় লাগবে। বাজার যদি আর বেশি ঊর্ধ্বমুখী না হয়, তাতেই বরং ক্রেতাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। তবে সরকার যদি এভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখে, তাহলে কয়েক মাস পরে বাজারে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে।