Thank you for trying Sticky AMP!!

‘উন্নয়ন অধ্যয়ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে’ বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ঢাকা, ৫ মে

ব্যাংক ঋণের সুদহার হবে বাজারভিত্তিক: গভর্নর

ব্যাংকঋণের সুদহারের বর্তমান নিয়ম থেকে সরে আসছে সরকার। সুদহার হবে বাজারভিত্তিক। ব্যাংকই ঠিক করবে সুদের হার কত হবে।

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ রোববার এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নতুন নিয়মটি বাস্তবায়নের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর ১ জুলাই থেকে সুদহার নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু করে। এই নিয়মে সুদহার নির্ধারণ হচ্ছে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের ওপর। যার নাম ‘সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল’ (ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড়) বা স্মার্ট রেফারেন্স রেট। ৯ মাস না যেতেই ‘স্মার্ট রেট’ থেকে সরে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্মেলনটির যৌথ আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও বণিক বার্তা। এর শিরোনাম ‘উন্নয়ন অধ্যয়ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন’। দুই দিনের এই সম্মেলন প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন ছিল আর্থিক ও মুদ্রানীতি নিয়ে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ছিলেন প্রধান অতিথি। এতে কয়েকজন সাবেক গভর্নর উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের দর্শক সারিতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। প্রশ্নোত্তরপর্বে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানারকম তথ্য আসছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি বের করতে গভর্নরকে পরামর্শ দেন।

বন্ড ছেড়ে বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকির অর্থ ঋণ হিসেবে দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, বন্ড ইস্যু না করলে দুটি সমস্যা হতো। প্রথমত, সরকারি যে সংস্থা ঋণ পাওয়ার কথা, সে সংস্থাটি ঋণখেলাপি হয়ে যেত। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকের কাছে টাকা নেই। ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে পড়েছে। তারাও ঋণ দিতে পারছে না। সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ড ইস্যু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপাতে হয়নি।

চেয়ার-টেবিলও ‘টাকা চায়’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের সঞ্চালনায় এই অধিবেশনে আরেক সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ফাঁদ থেকে সরকার বেরিয়ে আসতে পারেনি। সংস্থাটি সার ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমাতে সুপারিশ করেছে। ডিজেলের দাম বাড়াতে বলেছে। তাদের সব পরামর্শ শোনা যাবে না।

বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিবন্ধনের জন্য ১২ জায়গায় যেতে হয়। এখানকার চেয়ার, টেবিল, দরজা সবাই টাকা চায়। দেশের মানুষ নিজ দেশে বিনিয়োগ করে না, বাইরের মানুষ কীভাবে বিনিয়োগ করবে। দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মারাত্মক অভাব। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর রাজনৈতিক ও বিশেষ গোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মাঝেমধ্যে সাহস দেখাতে হবে।

সাবেক মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এটা ভয়ংকর। বিনিয়োগ বাড়াতে পদক্ষেপ দরকার।

আতিউর রহমান কথা বলেন মূল্যস্ফীতি নিয়ে। তিনি বলেন, বাজারে গেলে তাপ লাগে। একজন গৃহবধূ যখন বাজারে যান, নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির আঁচ ওই গৃহবধূর গায়ে লাগে। তিনি মূল্যস্ফীতি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরও। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি সরাসরি গরিব মানুষকে আঘাত করে।
অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক বক্তব্য দেন।