Thank you for trying Sticky AMP!!

অগণতান্ত্রিক উপায়ে ‘কালোটাকা’

কর ও করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্র; শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করা যাবে।

৩ জুন বাজেট ঘোষণার সময় ঢালাও কালোটাকার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সবাই ধরে নিয়েছে, ৩০ জুন ঢালাও কালোটাকার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার অর্থবিল পাসের সময় ঢালাওভাবে ফ্ল্যাট, জমি, শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্র—এসব খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি অব্যাহত রেখে সংশোধনী আনা হয়। ফলে সংসদে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ হলো না। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদেরা। আবার ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

এমনকি ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, এমন ঢালাওভাবে সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়নি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর শেষ মুহূর্তে অর্থবিলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢালাও কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি কেন বাজেট ঘোষণার সময় অর্থবিলে ঢোকানো হলো না। অর্থবিলে থাকলে এটি নিয়ে সংসদে আলোচনা হতো। কিন্তু এখন অর্থবিল পাসের আগে আগে ঢোকানো হলো, অনেকটা অগণতান্ত্রিক উপায়ে পাস করিয়ে নেওয়া হলো। এ নিয়ে সংসদে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটি ইঙ্গিত দেয়, বিশেষ মহলের কার্যসিদ্ধির জন্য অগণতান্ত্রিক উপায়ে এটি করা হয়েছে। আমাদের কাছে যা কাম্য নয়। প্রতিবছর এই সুযোগ দিয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যেন কালোটাকা উপার্জনকে উৎসাহিত করা হয়েছে।’

বারবার সুযোগ দেওয়াকে কালোটাকার মালিকদের গলায় ফুলের মালা দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি পবলেন, ‘করের বিষয়টি এখানে আইওয়াশ বা লোক দেখানো। যাঁরা কালোটাকার মালিক, তাঁদের কাছে করের কোনো মূল্য বহন করে না। এই সুযোগ অনেকটা অপরাধীদের ফুলের মালা দেওয়ার মতো। কালোটাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অসাংবিধানিক। এ ধরনের সুযোগের মাধ্যমে সৎ করদাতাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। সরকারও নৈতিকতার পরিচয় দিচ্ছে না।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, শেয়ারবাজার, জমি-ফ্ল্যাট ও শিল্পকলকারখানায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মানে, কালোটাকার মালিকেরা এসব খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখাবেন।

ব্যবসায়ীরাও কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগের বিরোধী। প্রতিবছর কালোটাকা সাদার সুযোগ দেওয়া হলে সৎ করদাতাদের মনোবল ভেঙে যায় বলে মনে করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা এফবিসিসিআই থেকে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চাইনি। তারপরও যদি সুযোগ দিতে চান, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেন। প্রতিবছর সুযোগ দেওয়া হলে সৎ ব্যবসায়ীদের মনোবল ভেঙে যাবে।’ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে অল্প কিছুদিনের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।