Thank you for trying Sticky AMP!!

এবার ৩৫ শতাংশ ব্যবসা হয়েছে

করোনা গত বছর ঈদবাজারে যে ধাক্কা দিয়েছিল, সেটি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ছিলেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।

ঈদের আগে কেনাকাটা জমেছিল চট্টগ্রামে

করোনার কারণে গত বছর ঈদের বাজার জমেনি। সেই ধাক্কা সামলে এ বছর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা ছিল ব্যবসায়ীদের। তাই রোজা শুরুর আগেই ব্যবসায়ীরা পণ্য সংগ্রহ করে দোকানে তুলেছিলেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এবারও সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় চট্টগ্রামের ঈদবাজারে তেমন বেচাবিক্রি হয়নি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে সপ্তাহখানেক বিক্রি ভালো হয়েছে। তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ বেশি হবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য দিনে সময় কমিয়ে রাতে দোকান খোলার সময় বাড়ানো হলে বেচাকেনা আরও বাড়ত। তাতে দিনের বেলায় ভিড় কমত। আর করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়ানোর যে লক্ষ্য, সেটিও ঠিক থাকত।

ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে ২৫০টির মতো ছোটবড় বিপণিবিতান আছে। এর মধ্যে অভিজাত বিপণিবিতানের সংখ্যা ১২টি। বিপণিবিতানগুলোতে ৩০ হাজারের মতো ছোটবড় দোকান রয়েছে। সাধারণত ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে এবার তা হাজার কোটি টাকার মতো হয়েছে।

চট্টগ্রামের অভিজাত বিপণিবিতান মিমি সুপার মার্কেটে দোকান রয়েছে ২৮২টি। অভিজাত এই মার্কেটে ছেলেমেয়েদের পোশাক ও জুতা বেচাকেনা হলেও শাড়ি ও গয়না বেচাকেনায় ছিল মন্দা। মিমি সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজায় ভিড় এড়াতে আমরা সকাল ১০টার পরিবর্তে দুপুরের পর থেকে মার্কেট খোলা রেখে রাতে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। মূল বেচাকেনার সময় অর্থাৎ রাত আটটায় মার্কেট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তাতে প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা হয়নি। এবারের বিক্রি বড়জোর আগের ৩০-৩৫ শতাংশের মতো হয়েছে।’

অন্যান্য বিপণিবিতানের বিক্রেতারাও জানান, এবার ছেলেমেয়েদের পোশাক বেচাকেনা বেশি হয়েছে। জুতার বেচাকেনাও ভালো ছিল। তবে শাড়ি তেমনি বিক্রি হয়নি। এবারে গয়না বিক্রিতেও ছিল মন্দাভাব। প্রসাধনসামগ্রীও প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি।

নগরের স্যানমার ওশেন সিটির ব্যবসায়ী আনিসুল ইসলাম জানান, একটি দোকানের ব্যবসা থেকে তিনি দুটি দোকান করেছিলেন। কিন্তু করোনার ধাক্কায় গত ফেব্রুয়ারিতে একটি দোকান ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘করোনার প্রভাবে লোকসান দিয়েও ব্যবসাটা ধরে রেখেছিলাম। এবার মেয়েদের পোশাক কিছুটা বিক্রি হয়েছে। না হলে যে দোকান বাকি ছিল, সেটিও ধরে রাখা কঠিন হতো। এখন হয়তো ব্যবসাটা আরও কিছুদিন চালিয়ে নিতে পারব।’

রোজার আগে গত ২ এপ্রিল নগরের চকবাজারে শেঠ গ্রুপের ‘বালি আর্কেড’ নামে আধুনিক সুপারমল চালু হয়। ১১ তলাবিশিষ্ট এই সুপারমলে ২৫৯টি দোকান রয়েছে, যেখানে নানা ব্র্যান্ডের পণ্যের আউটলেট চালু করেছেন অনেক নতুন উদ্যোক্তা। শেঠ গ্রুপের পরিচালক (অপারেশন) তুলু উশ শামস প্রথম আলোকে বলেন, বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যবসা করতে হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রেতারা কেনাকাটা করেছেন। ব্যবসা একেবারে খারাপ হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ না এলে ব্যবসা আরও ভালো হতো।

করোনার মধ্যেও খুলশী টাউন সেন্টারে এবার ‘কালারস বাই নিগার হোসেন’ নামে নতুন প্রতিষ্ঠান খুলেছেন তরুণ নারী উদ্যোক্তা নিগার হোসেন। কিন্তু ১৫ দিন পরই করোনা মোকাবিলার বিধিনিষেধ শুরু হয়। আগে অনলাইনে পোশাক বিক্রি করতেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। ব্যবসা সম্প্রসারণের পরই ধাক্কা খেলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা হয়নি। তবে ঈদের আগে যেটুকু সময় খোলা রাখার সুযোগ পেয়েছি, তখন পোশাক বিক্রি হয়েছে।

পোশাকের পাইকারি মোকাম টেরি বাজারের ব্যবসায়ীরাও জানান, এবার তাঁরা ভালো ব্যবসা করতে পারেননি। বিভিন্ন শহর ও উপজেলার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পোশাক বিক্রি করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে গত বছরের ধাক্কা এবার পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না পারলেও ব্যবসাটা চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ হয়েছে বলে জানান টেরিবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর।