Thank you for trying Sticky AMP!!

চুপি চুপি কালোটাকার সুযোগ

ঢালাও কালোটাকার সুযোগ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন। তবে আয়কর অধ্যাদেশে শিল্প খাতে কালোটাকার সুযোগ এখনো আছে। ফ্ল্যাটও কেনা যাবে

চুপি চুপি কালোটাকার সুযোগ থেকেই গেল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল শুক্রবার বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, ঢালাও কালোটাকার সুযোগ নেই। কীভাবে আয়কর অধ্যাদেশে কালোটাকার সুযোগটি রয়ে গেল, তা এখন পরিষ্কার করা যেতে পারে।

গত বছরের জুনে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় ঢালাওভাবে কালোটাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আয়কর অধ্যাদেশে ১৯ এএএএ এবং ১৯ এএএএএ—এই দুটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। ১৯ এএএএ ধারায় কালোটাকা ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য এক বছরের লকইন বা বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার শর্ত দেওয়া হয়। আর ১৯ এএএএএ ধারায় নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই ধারায় আয়তনভেদে ও এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। এক বছরের জন্য অর্থাৎ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুযোগ দেওয়া হয়।

এবারের বাজেট বক্তব্যে কিংবা অর্থবিলের কোথাও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া বা রহিত করার কোনো কথা বলা হয়নি। এর মানে হলো, আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ এএএএ ও ১৯ এএএএএ—এই দুটি ধারায় ৩০ জুন পর্যন্ত কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সেটির সময়সীমা শেষ হয়ে যাবে। ৩০ জুনের পর আর কেউ এই সুযোগ নিতে পারবেন না।

তাহলে কীভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি এখনো থেকে গেল? এর উত্তরও আয়কর অধ্যাদেশে আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের অর্থ আইনে দেখা গেছে, ১৯ বিবিবিবিবি নামে একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশে যা-ই থাকুক না কেন, এলাকা ও আয়তনভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে ওই বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নেবে এনবিআর। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে অপ্রদর্শিত টাকায় ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এটিকে বিশেষ কর সুবিধা হিসেবে বলা হয়। তবে এনবিআর শর্ত দিয়েছে, অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে এবং অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত অর্থ সাদা করা যাবে না।

আয়কর অধ্যাদেশে ১৯ ডিডি ধারায় শিল্প খাতে কালোটাকা সাদার সুযোগ দেওয়া রয়েছে। এ ধারার আওতায় হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ২০২৪ সাল পর্যন্ত রয়েছে। কেউ এ সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগ করলে অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না এনবিআর। এ ছাড়া অপ্রদর্শিত বৈধ আয় নির্ধারিত করের ওপর ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়েও ঘোষণায় আনার সুযোগ রয়েছে।

শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে ঢালাওভাবে কালোটাকার সুযোগের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ফলে ৩০ জুনের পর সুযোগটি শেষ হয়ে যাবে। যদিও অনেকে মনে করছেন, ঢালাও সুযোগটি বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো, এই সুযোগ আরও ২৫ দিন রয়েছে।

তবে এক বছর ধরে নগদ টাকা বেশি সাদা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩৪ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ তেমন একটা নেননি করদাতারা। গত জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মাত্র ৩৪১ জন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে এই সুযোগ নিয়েছেন। জমি কিনেও খুব একটা কালোটাকা সাদা হয়নি। সঞ্চয়পত্র কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আর দিতে চান না নীতিনির্ধারকেরা। কারণ, এমনিতেই ১০ শতাংশ কর দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সঞ্চয়পত্র কেনার পর সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরকে প্রতিবছর গড়ে ১০ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হয়।

প্রায় সব সরকারের আমলেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো এ দেশের করদাতাদের সামনে এ ধরনের সুযোগ আসে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে ১৭ বার এই সুযোগ পেয়েছেন করদাতারা। সবচেয়ে বেশি সাড়া মিলেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে। এরপর এবারই সবচেয়ে বেশি সাড়া মিলল।