Thank you for trying Sticky AMP!!

টাকার রং বদলে বাড়ছে ফ্ল্যাটের দাম

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সৎ করদাতা ও নাগরিকদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। এতে একশ্রেণির মানুষ অবৈধভাবে টাকা উপার্জনে উৎসাহিত হচ্ছেন। এটা সমতা ও গণতন্ত্রের পরিপন্থী বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনেরা।

দেশের এই কালোটাকা মূলত আবাসন খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে, যেখানে আবার নতুন করে কালোটাকা সৃষ্টি হচ্ছে। এই টাকা আবাসনে বিনিয়োগ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু প্লট ও ফ্ল্যাটের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তাই এই চক্র ভেঙে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বক্তারা।

আজ ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

Also Read: আসুন, অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় সাদা করা হয়েছে। ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা কর দিয়ে এই টাকা বৈধ করেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি। চলতি বছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় সম্পর্কিত আইনে পরিবর্তন আসায় করদাতারা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে উৎসাহিত হয়েছেন বলে বক্তারা মত দেন।

বক্তারা আরও বলেন, কালোটাকা সাদা করার নৈতিকতা এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। অনেক দিন ধরে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকলেও চলতি বছরে এই সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, তাতে এ নিয়ে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৯৬২ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছে। এটা যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। এর আগে ২০০৭-০৯ সালে অনেক কর আদায় হয়েছিল। এবার ছয় মাসে তার চেয়ে বেশি কর আদায় হয়েছে।

হুন্ডি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা হচ্ছে। দুদক, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এর জন্য দায়ী।

এই পরিপ্রেক্ষিতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, এত বেশি টাকা কেন সাদা হচ্ছে। ব্যাপারটা কি এই, কালোটাকার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে, নাকি প্রণোদনা বেশি কার্যকর হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তাঁর প্রশ্ন, এই টাকা কারা সাদা করছেন—ছোটরা নাকি বড়রা—কোন খাতে এই টাকা সাদা হচ্ছে। এর তাৎপর্য কী জানতে চেয়ে তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে এর প্রভাব কী, তা বুঝতে হবে।

অনুষ্ঠানে ‘কালোটাকা সাদা হচ্ছে: অর্থনীতির লাভ না ক্ষতি’ শীর্ষক এক উপস্থাপনা পেশ করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি জানান, হংকং, ফিলিপাইন, ইরান, নিকারাগুয়া, বলিভিয়ার মতো দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে। প্রথম পর্বে এসব দেশ কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু একপর্যায়ে তারা শক্ত হাতে কালোটাকার উৎস বন্ধ করেছে। ফলে সেসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে চমকপ্রদ গতি এসেছে বলে তাঁর মত।

অপ্রদর্শিত ও কালোটাকার মধ্যে পার্থক্য করে তিনি বলেন, অনেক সময় মানুষ নানা কারণে বৈধভাবে উপার্জিত আয় প্রদর্শন করে না। বিদ্যমান হারে কর ও জরিমানা দিয়ে সেই টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।

পাকিস্তান আমল থেকেই কর ছাড় দেওয়ার চল শুরু হয়েছে। একটি সময় কেবল এই সুযোগ ছিল না, সেটা হলো, বঙ্গবন্ধুর জমানায়। এতে বিশেষ ফল আসছে না—বাড়ছে না দেশের কর-জিডিপির অনুপাত।
রেহমান সোবহান, চেয়ারম্যান, সিপিডি

পাকিস্তান আমল থেকেই কর ছাড় দেওয়ার চল শুরু হয়েছে বলে জানান সিপিডির চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। একটি সময় কেবল এই সুযোগ ছিল না, সেটা হলো, বঙ্গবন্ধুর জমানায়। এতে বিশেষ ফল আসছে না—বাড়ছে না দেশের কর-জিডিপির অনুপাত। তিনি আরও বলেন, কলকাতার মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা জন্মলাভের সঙ্গে কালোটাকা সাদা করার বুদ্ধি শিখে আসে। মুম্বাইয়ের যে চলচ্চিত্র শিল্প, সেটাও চলে মূলত কালোটাকার শক্তিতে। এই টাকা ব্যয় হয় নির্বাচনে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, হুন্ডি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা হচ্ছে। দুদক, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এর জন্য দায়ী। কালোটাকা প্রতিরোধের সবচেয়ে টেকসই উপায় হিসেবে তাঁরা বলেন, এনবিআরকে শক্তিশালী করতে হবে। সে জন্য দরকার বিনিয়োগ। কিন্তু কোনো সরকারই এতে বিশেষ নজর দেয়নি। উন্নয়ন যা হয়েছে, দাতাদের জোরাজুরিতে। সরকারের তাতে বিশেষ অংশগ্রহণ নেই।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যবসায়ী-রাজনীতিক তাবিথ আওয়াল প্রমুখ।