Thank you for trying Sticky AMP!!

পণ্য গর্তে, ডলার চলে গেছে বিদেশে

বিদেশি মুদ্রা মার্কিন ডলারে কেনা হয়েছিল আপেল, কমলা, মাল্টা, খেজুর, চকলেট, জুস, পেঁয়াজ, মটর ডাল, শর্ষেদানা আরও কত কী! আমদানিকারকেরা খালাস না নেওয়ায় এসব তাজা ফলমূল বা ভোগ্যপণ্য খাওয়া হয়নি কারও। কনটেইনারের ভেতরে পচে–গলে নষ্ট হয়েছে। তাই এখন এসব ফলমূল গর্তে পুঁতে ফেলা হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাগজপত্রে তা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারককে সেই পণ্য খালাসের জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা দেয়। এ সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস না নিলে তা নিলামে তোলা হয়। বারবার নিলামে তোলার পরও অনেক পণ্য বিক্রি হয় না। আবার মামলা থাকলে পণ্য নিলামে তোলা যায় না। এমন মারপ্যাঁচে পড়ে থাকতে থাকতে একসময় পচে–গলে নষ্ট হয়ে যায়। তখনই এসব পণ্য ধ্বংসের আয়োজন করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

এবার মোট ২৯৮টি কনটেইনারে থাকা ৬০ লাখ কেজি পণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই কার্যক্রম। এসব পণ্যের বেশির ভাগই দুই-তিন বছরের মধ্যে আমদানি করা হয়েছে। আবার এক দশক আগে আমদানি করা কিছু পণ্যও রয়েছে। বন্দর ও ডিপো থেকে গাড়িতে করে নিয়ে উত্তর হালিশহরের চৌধুরীপাড়ায় বড় গর্ত করে বিপুল ফলমূল পুঁতে ফেলা হচ্ছে। ধ্বংসের তালিকায় থাকা এসব পণ্য আমদানি বাবদ কত ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে পণ্যভেদে গড় আমদানির দর তুলনা করে দেখা গেছে, এসব পণ্য আমদানিতে ব্যয় ২৪ লাখ ডলারের কম হবে না। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৫ টাকার হিসাবে যা ২০ কোটি টাকার বেশি।

চট্টগ্রাম কাস্টমের উপকমিশনার সুলতান মাহমুদ বলেন, আমদানির পর ব্যবসায়ীরা খালাস না নেওয়ায় নিলামে তোলা হয়েছিল অনেক পণ্য। তবে দফায় দফায় নিলামে তুলেও অনেক পণ্যের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করা যায়নি। যেসব পণ্য ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে, সেগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে।

আমদানি পণ্য কেন খালাস নেননি ব্যবসায়ীরা বা কেন নষ্ট হলো, পণ্যভেদে সেসবের গল্পও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন গত বছর বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাজারে দাম পড়ে যায়। তাই লোকসানের শঙ্কায় বন্দর থেকে খালাস নেননি অনেকে। খালাস না নেওয়া পেঁয়াজের বড় অংশই বিক্রির জন্য নিলামে তোলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিলামেও বিক্রি না হওয়ায় সাত কনটেইনারে থাকা প্রায় দুই লাখ কেজি পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। সেগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে এবার।

ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য আমদানির আগে ব্যাংকে ঋণপত্র খোলার সময় কিছু টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে পণ্য খালাস না করায় ব্যাংককে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে পণ্য বন্দরে পৌঁছানোর পর পুরো টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। আমদানিকারকেরা টাকা পরিশোধ না করলেও অনেক ক্ষেত্রে পণ্য চলে আসায় পুরো টাকা রপ্তানিকারকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। বিদেশি মুদ্রা পাঠানো হলেও তা দিয়ে কেনা পণ্য আর ব্যবহার করা যায়নি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, যেসব পণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে, সেগুলোর সিংহভাগই আমদানি ব্যয় বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করতে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো পরিশোধ করতে হয়নি। এসব পণ্য যদি নিলামে তুলে দ্রুত বিক্রি করা যেত, তাহলে হয়তো ধ্বংসের আয়োজন করতে হতো না।