Thank you for trying Sticky AMP!!

কর পরিশোধের ‘এ চালান’ নিয়ে বিপাকে করদাতারা

আয়কর রিটার্ন দাখিল

আয়কর পরিশোধে ‘অটোমেটেড চালান’ বা ‘এ চালান’ নিয়ে ধূম্রজাল কাটছে না। এ বছর চালু হওয়া নতুন আয়কর আইনের আওতায় এ চালানের মাধ্যমে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার কর পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে আয়কর নির্দেশিকা তৈরি করেছে, তাতে এমন বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তেমন প্রচারণা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন করদাতারা। অনেকেই এ চালানের বিষয়ে জানেন না। আবার ‘এ চালান’ কীভাবে করতে হয়, অনেকে তা–ও জানেন না।

তবে গতকাল রোববার রাজধানীর প্রেসক্লাব, তোপখানা, সেগুনবাগিচা এলাকার কর অঞ্চল-১, কর অঞ্চল-৭, কর অঞ্চল-৮, কর অঞ্চল-১১ ও কর অঞ্চল-৫ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মাঠপর্যায়ের কর কর্মকর্তারা এ চালানের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা দেখাচ্ছেন। কোনো করদাতা যদি রিটার্ন জমার সময় পে অর্ডার বা অন্য কোনো চালান নিয়ে যান, তাহলে সেটাই গ্রহণ করছেন। আইনি বাধ্যবাধকতা মানতে পরে অবশ্য তা ‘এ চালানে’ রূপান্তর করা হচ্ছে।

দেখা গেছে, প্রতিটি কর অঞ্চলেই ই-রিটার্ন দাখিল বুথে এ চালান দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি পে অর্ডারও নিয়ে আসেন, তাহলে ব্যাংক বুথে গিয়ে এ চালান তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন। এ ছাড়া কয়েকটি কর অঞ্চলের কার্যালয়ে ব্যাংকের একটি করে বুথও বসানো হয়েছে।

গতকাল দুপুরে কর অঞ্চল-১১ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, করমেলার মতো করে পরিপাটিভাবে সাজানো রিটার্ন বুথ, তথ্যসেবাকেন্দ্র, ই-রিটার্ন জমা বুথসহ সব ধরনের কর সেবার ব্যবস্থা আছে। তবে তেমন ভিড় দেখা যায়নি।

সেখানেই কথা হয় মিরপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী রুবাইয়াত সাদীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে এসে শুনলাম, “এ চালান” ছাড়া কর পরিশোধ করা যাবে না, রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে না। কীভাবে এ চালান করে, তা জানি না। আমি পে অর্ডার নিয়ে এসেছি। পরে ব্যাংক বুথ থেকে তা এ চালানে রূপান্তর করেছি। এ চালানের বিষয়ে আরও বেশি প্রচারণা চালানো উচিত। প্রচারণার অভাবে করদাতাদের হয়রানি বাড়ছে।’

এ চালান নিয়ে প্রচারণা চালানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে কর অঞ্চল-১১–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার সাধন কুমার রায়ের সঙ্গে সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কর পরিশোধে এ চালান বাধ্যতামূলক। ঘরে বসেই অনলাইনে কর পরিশোধ করা যায়। সরাসরি রাষ্ট্রের কোষাগারে টাকা জমা হয়। কিন্তু আয়কর বিভাগের প্রচারণার অভাবে এত ভালো উদ্যোগটি কাজে আসছে না।

কীভাবে এ চালান করবেন
অর্থ মন্ত্রণালয় আইবাস সিস্টেমের মাধ্যমে এ চালানে কর পরিশোধ করা যায়। এনবিআরের জমা হিসেবে এই চালান তৈরি করতে হয়। মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড ব্যবহার এবং ব্যাংকে নগদ টাকা প্রদান—এই চার ধরনের ব্যবস্থায় এ চালানে করের টাকা পরিশোধ করা যায়।

অন্যদিকে একজন করদাতা যদি কর অঞ্চলে গিয়ে এ চালান তৈরি করতে চান, তাও তিনি করতে পারবেন। ই-রিটার্ন জমার বুথে গেলেই কর কর্মকর্তারা এ চালান বানিয়ে দেবেন। এ ক্ষেত্রে আপনি নগদ টাকায় কর পরিশোধ করতে পারবেন না। নগদ, বিকাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ড ব্যবহার বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর পরিশোধ করতে হবে।

এখন ভিড় নেই
সেগুনবাগিচা, পল্টন ও তোপখানা এলাকায় কর কার্যালয়গুলোয় গিয়ে দেখা গেছে, রিটার্ন জমা দিতে করদাতাদের ভিড় নেই বললেই চলে। ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে পারছেন তাঁরা। জানা গেছে, কর অঞ্চল-১১–এর গত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৬০০-৭০০ রিটার্নও জমা পড়েনি। অবরোধের কারণে তেমন ভিড় নেই। আগামী সপ্তাহ থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নভেম্বর মাসজুড়ে দেশের ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেল কার্যালয়ে করসেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি সার্কেলে করদাতাদের জন্য সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে রিটার্ন জমা নেওয়ার পাশাপাশি রিটার্ন ফরম পূরণেও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেন, রিটার্ন জমার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেওয়া হবে। এ ছাড়া ই-রিটার্ন জমা দিতে আগ্রহী করদাতাদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে।

সময় বাড়ানোর দাবি
৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। তবে এ সময় আরও দুই মাস বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন। সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ৮ নভেম্বর এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ উজ্জামান খান।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চলমান হরতাল–অবরোধ, অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতি, নতুন আইন সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব ও চলতি অর্থবছরের পরিপত্র দেরিতে প্রকাশ করায় করদাতাদের কাগজপত্র সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে। তাই রিটার্ন দাখিলের সময় দুই মাস বৃদ্ধি করার দাবি জানায় কর আইনজীবীদের এই সংগঠন।