Thank you for trying Sticky AMP!!

বিক্রি কমে অর্ধেক, দামও বাড়তি 

বনফুল মিষ্টির কারখানায় আগে দিনে ৮ থেকে ১০ টন মিষ্টি তৈরি হতো। এখন তা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। 

মো. সারোয়ার ১৭ বছর ধরে মিষ্টির ব্যবসা করেন। চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম এলাকা মুরাদপুরের রাস্তার ধারেই তাঁর দোকান। তিন মাস আগে তাঁর দোকানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মিষ্টি বিক্রি হতো। এখন বিক্রি কমেছে ৮০ ভাগ। গত বুধবার তাঁর দোকানে বিক্রি হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২০০ টাকার মিষ্টি।

সারোয়ার সিজল কোম্পানির মিষ্টি বিক্রি করেন। অনেকটা আক্ষেপের সুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্রিবাট্টা কমার কারণে ঠিকমতো কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছি না। বিক্রি না হওয়ায় প্রায়ই কিছু মিষ্টি ফেলে দিতে হচ্ছে। এমন দুরবস্থায় আগে কখনো পড়িনি। মিষ্টি তৈরির সব কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের মিষ্টির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এতে ক্রেতাও কমে গেছে।’

বিক্রি কমে যাওয়ার একই কথা জানালেন বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির মুরাদপুর শাখার ব্যবস্থাপক মনির হোসেন। তিনি জানালেন, হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা এখন মিষ্টি কিনতে আসছেন। মাসখানেক আগেও প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি হতো। এখন বিক্রি কমে অর্ধেক হয়ে গেছে।

ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন লোকসান দিয়ে টিকে আছে। আর বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে খরচ কমাচ্ছে, তাতে মিষ্টির উৎপাদন কমে গেছে। এমনকি কর্মীও ছাঁটাই হচ্ছে।
মারুফ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতি

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বনফুল থেকে মিষ্টি কিনছিলেন আবু রায়হান নামের এক ক্রেতা। কথায়–কথায় তিনি জানান, আগে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন দুই সন্তানের জন্য মিষ্টি কিনতেন। এখন মাসে এক বা দুবার কেনেন। বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচে লাগাম টেনেছেন, তাতেই কমিয়ে দিয়েছেন মিষ্টি কেনা।

মিষ্টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিষ্টিজাতীয় পণ্য তৈরিতে সাধারণত তরল দুধ, চিনি, গুঁড়া দুধ, তেল, ডিম, ময়দা, মাখনসহ আরও কয়েকটি কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। বাজারে এখন প্রায় সব কাঁচামালের দামই বাড়তি। এ কারণে মিষ্টিজাতীয় পণ্যের দামও বাড়াতে হয়েছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমে গেছে।

মিষ্টি প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব
ধরনের কাঁচামালের দাম এখন বাড়তি। কিন্তু মিষ্টিজাতীয় পণ্যের দাম সেভাবে বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। দাম বেশি বেড়ে গেলে ক্রেতারা একেবারেই পণ্য কেনা বন্ধ করে দেবেন। তাই কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে মিষ্টির দাম বাড়ানো হয়নি। তা সত্ত্বেও বিক্রি কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। এ কারণে উৎপাদনও কমাতে হয়েছে আমাদের।’

এম এ মোতালেব জানান, দেশের প্রায় ৪০০ দোকানে বনফুলের পণ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া তাঁদের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে ২০ থেকে ২৫টি। বর্তমানে চারটি কারখানায় পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে মিষ্টিজাতীয় পণ্যের দৈনিক উৎপাদন ছিল ৮ থেকে ১০ টন। এখন তা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে।

২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়ল দাম

চট্টগ্রামে বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি, ফ্লেভারস, ফুলকলি, হাইওয়ে সুইটস, ওয়েল ফুডসহ আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মিষ্টিজাতীয় পণ্য পাওয়া যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্যের দামে তারতম্য রয়েছে। তবে বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মিষ্টির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১৫ দিন আগেও বনফুলের সাদা, কালো ও লাল জাম মিষ্টির কেজি ছিল ২৮০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। এ ছাড়া চমচমের দাম ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে সাড়ে চার শ টাকায়। রসমালাইয়ের দামও বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজির দাম ৪২০ টাকা।

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, আনন্দভোগ নামের মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়। কাটারিভোগ ৪৪০ টাকা, কস্তুরিভোগ ৪৩০, রসমঞ্জরি ৪২০, মিনি চমচম ৪৪০, কদম লাড্ডু ৩১০, মাওয়া লাড্ডু ৩২০, মাওয়া বালুশাই ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এসব মিষ্টির দাম এক মাস আগেও ২০ থেকে ৫০ টাকা কম ছিল।

চট্টগ্রাম নগরে ১৭টি বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে মিষ্টিজাতীয় পণ্য বিক্রি করে ফ্লেভারস। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আলাউদ্দিন আল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিষ্টির উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমাতে হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আগে যাঁরা পাঁচ কেজি মিষ্টি কিনতেন, তাঁরা এখন দুই কেজি কিনছেন। কখনো কিনছেনই না। তিন মাস ধরে মিষ্টির ব্যবসায় অস্থিরতা চলছে। অন্যদিকে চিনির দামও এখন অনেক বাড়তি। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজির চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন লোকসান দিয়ে টিকে আছে। আর বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে খরচ কমাচ্ছে, তাতে মিষ্টির উৎপাদন কমে গেছে। এমনকি কর্মীও ছাঁটাই হচ্ছে। মিষ্টির দামও বেশি বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ, দাম বেশি বাড়লে ক্রেতা পাওয়া যাবে না।