Thank you for trying Sticky AMP!!

এলডিসি-উত্তরণের পরও ভর্তুকি থাকবে

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে।

সম্মেলন সূত্রে জানা গেছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দেশগুলোকে বাজার–সুবিধার পাশাপাশি আরও তিন বছর বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে। যেমন এই সময়ে ভর্তুকি দিলেও তাদের বিরোধ নিষ্পত্তিপ্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে না। তবে বেশ কিছু বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

জি-৯০ ভুক্ত দেশগুলোর প্রস্তাব ছিল, উন্নয়নশীল ও এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে যেসব বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল, সেগুলো কার্যকর করা হোক।

ডব্লিউটিওর ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত চলতি বছরের ডিসেম্বরে এবং কিছু কিছু বিষয়ে সংস্থার চতুর্দশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এমন ঐকমত্য হয়েছে। এসব সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য।

ডব্লিউটিওর ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল রাত ১০টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তা চলছিল। সম্মেলন সূত্রগুলো জানিয়েছে, কোনো ঘোষণা এলেও তা মধ্যরাতের আগে (গত রাতে) জানা যাবে না। এমনকি আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। আবার কোনো ঘোষণা না–ও আসতে পারে। সাধারণত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় সব দেশ কোনো বিষয়ে একমত না হলে তা গ্রহণ করা হয় না। সে কারণে সব দেশকেই ঐকমত্য পৌঁছাতে হয়।

জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ নিজ স্বার্থ নিয়ে সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো এলডিসি থেকে উত্তরণ টেকসই করার লক্ষ্যে নানা ধরনের আলাপ–আলোচনা করেছে। এলডিসি পাঁচ বা দোহা কর্মসূচিতে বলা হয়েছিল, উত্তরণের সময়ে দেশগুলোকে সাহায্য করা হবে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে ১৭ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায়ও উত্তরণকালীন স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহায়তার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যে এই দেশগুলোর হিস্যা দ্বিগুণ করার কথা। কিন্তু এগুলো এখনো কার্যকর হয়নি। উত্তরণ টেকসই করতে বাংলাদেশ উত্তরণের পরও সুযোগ–সুবিধা আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার কথা বলেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ডব্লিউটিওর সাধারণ পরিষদের সভায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিষয়টি সদস্যদেশগুলোর সদিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইতিমধ্যে সুবিধা সম্প্রসারণের কথা বলেছে, কানাডাও সেই পথে আছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম এখন এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সুযোগ–সুবিধা আরও কিছুদিন সম্প্রসারণ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে যেসব প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে, সেগুলোও কিছুদিন পাওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনায় কিছুটা ঐকমত্য হয়েছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় সাধারণত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। তবে উত্তরণকালীন পর্যায়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে যেন এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে কিছুটা মতৈক্য হয়েছে।

এদিকে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ২০৩৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ যেন ওষুধশিল্পের মেধাস্বত্ব আইনের ক্ষেত্রে ছাড় পায়, সে বিষয়ে আলোচনা হলেও তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক নয়।

ডব্লিউটিওর এবারের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে কৃষি খাতের ভর্তুকি নিয়ে ভারতের সঙ্গে উন্নত দেশগুলোর বড় ধরনের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। ভারত বলেছে, কৃষিপণ্য কেনার সময় যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা মোট ভর্তুকির মধ্যে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। এটা পৃথকভাবে হিসাব করা উচিত। কিন্তু উন্নত দেশগুলো বলছে, এটা মোট ভর্তুকির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গতকাল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারত এ বিষয়ে একদম অনড় অবস্থানে ছিল।

উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের আরেকটি বড় মতপার্থক্যের জায়গা হলো ই–কমার্স। ভারত মনে করছে, ১৯৯৮ সালে ই–কমার্সে শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে যে মুলতবি ছিল, সেটা তুলে নেওয়া দরকার। তাদের যুক্তি হলো এই মুলতবির কারণে ই–কমার্সের পণ্য আমদানিতে বিপুল পরিমাণ শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভারত। ভারত বলেছে, এ খাতে কয়েক বছরে ৫০ কোটি ডলার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা।

সম্মেলন সূত্রে জানা যায়, এ বিষয়ে বাংলাদেশের মনোভাব কিছুটা ভিন্ন। কারণ, বাংলাদেশে ই–কমার্সের খুব বেশি পণ্য আমদানি হয় না। অনেক উন্নয়নশীল দেশ ই-সেবা রপ্তানি করে বলে তারা ভারতের এই অবস্থানের পক্ষপাতী নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের চতুর্দশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক পর্যন্ত এই বিষয়টি ঝুলে থাকতে পারে।

এবারের সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধিদলের পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারি খাত থেকেও অনেকে অংশ নিয়েছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান তাঁদের একজন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উল্লিখিত দুটি বিষয় নিয়ে রীতিমতো অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাত ১২টায় (গত রাতে) মন্ত্রীদের বৈঠক হবে, সেখানে সর্বসম্মত ঐকমত্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিছু বিষয় স্থগিত রাখা হতে পারে। পরে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও হতে পারে।