মতিঝিলে মুচির দোকানেও ‘ডিজিটাল’ লেনদেন সুবিধা
মতিঝিলের ১ হাজার ২০০ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এই কিউআর কোডে টাকা লেনদেনের সুযোগ পাচ্ছেন।
পর্যায়ক্রমে দেশের বড় শহরগুলোর বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও এ ধরনের লেনদেনের আওতায় আসবে।
রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে চা বিক্রি করেন বাবুল চন্দ্র ঘোষ। নগদ টাকার পাশাপাশি তিনি এখন ডিজিটাল বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনও করছেন। এ জন্য একটি ব্যক্তিক খুচরা হিসাবের বিপরীতে তাঁকে বাংলা কিউআর কোড দেওয়া হয়েছে। এই কিউআর কোডের একটি অনুলিপি তাঁর দোকানে টাঙানো আছে। তাতে কোনো গ্রাহক চাইলে বাবুলের চায়ের দোকানে নগদ টাকার পরিবর্তে ব্যাংক অ্যাপ বা বিকাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে চায়ের দাম পরিশোধ করতে পারছেন। গতকাল বুধবার থেকে এ সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে।
বাবুল চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে আমাকে এ কিউআর কোড দেওয়া হয়েছে। নতুন করে দেখলাম আশপাশের আরও অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আমার দোকানে প্রতিদিন কিছু ক্রেতা নগদ টাকার পরিবর্তে কিউআর কোডে টাকা পরিশোধ করছেন। মোবাইলে খুদে বার্তা আসলে বুঝি টাকা চলে এসেছে। তবে আমি এই টাকা দিনে দিনে তুলে নিই না। ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখি। বড় কোনো ঝামেলায় পড়লে তখন এই টাকা তুলে কাজে লাগাই। তাই সেবাটি চালুর ফলে মাসে মাসে আমার কিছু সঞ্চয় জমছে।’
এখন পর্যন্ত প্রযুক্তিনির্ভর এ লেনদেনে যুক্ত হয়েছে ১০টি ব্যাংক, ৩টি এমএফএস ও ৩টি আন্তর্জাতিক কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
বাবুল ঘোষের মতো মতিঝিলের ১ হাজার ২০০-এর বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক ‘স্ক্যান টু পে’ পরিষেবার আওতায় এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে ১০টি বেসরকারি ব্যাংক, ৩টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) ও ৩টি আন্তর্জাতিক কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। পর্যায়ক্রমে দেশের বড় শহরগুলোর বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও এ ধরনের লেনদেনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলা কুইক রেসপন্স (কিউআর) হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের নকশায় তৈরি একটা ইন্টারঅপারেবল কোডভিত্তিক ডিজিটাল লেনদেন পরিষেবা। যার মাধ্যমে সহজেই ব্যাংক বা এমএফএসের অ্যাপ থেকে বিল পরিশোধ করা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নতুন ধরনের এ সেবা চালুর ফলে ‘লেস ক্যাশ সোসাইটি বা নগদ লেনদেনমুক্ত সমাজ’ হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। ডিজিটাল আর্থিক কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত হবেন দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও।
গতকাল বুধবার ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এ উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে। এ সেবার আওতায় মতিঝিলের ১ হাজার ২০০ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এই কিউআর কোডে টাকা লেনদেনের সুযোগ পাচ্ছেন। এ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, ধীরে ধীরে মতিঝিলকে নগদ টাকার লেনদেনমুক্ত করার লক্ষ্যে এ সেবা চালু করা হয়েছে।
মতিঝিল এলাকার ব্যাংকপাড়া ঘুরে দেখা যায়, মুচি থেকে শুরু করে চা–বিক্রেতা এমনকি ভাসমান দোকানদারেরা ব্যক্তিক খুচরা হিসাবের বিপরীতে এই কিউআর কোড সুবিধা পেয়েছেন। এরই মধ্যে তাঁরা এই কোড ব্যবহারও শুরু করেছেন। তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত হলেও ক্রেতারা এ সেবা ব্যবহারে এগিয়ে না এলে সেবাটি পরিপূর্ণতা পাবে না।
মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনের সামনের ফুটপাতে বসে জুতা পলিশ ও সেলাইয়ের কাজ করেন শেফালি দাস। তিনি নিজে বিষয়টি খুব ভালো না বুঝলেও কিউআর কোডভিত্তিক সেবাটি চালু করেছেন। গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত তিনি মাত্র একজন সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে কিউআর কোডে টাকা গ্রহণ করেছেন। ৩০ টাকার এ লেনদেনের খুদে বার্তার ভাষা বোঝাটাও তাঁর জন্য একটা চ্যালেঞ্জ বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে শেফালি দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক সময় ভাংতি টাকা থাকে না। ৫০০ টাকা দিয়ে সেবা নিলে আমার জন্য টাকা রাখাটা কষ্টকর হয়ে যায়। নতুন এ সেবা চালুর ফলে সেই জটিলতা কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু প্রথম দিনে এ সেবা খুব বেশি গ্রাহক ব্যবহার করেননি। বেশির ভাগই নগদ টাকা লেনদেন করেছেন।’
বাংলা কিউআর কোডভিত্তিক এ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এবি, ইস্টার্ণ, ইসলামী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, দি সিটি, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ও ওয়ান ব্যাংক। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ, এমক্যাশ, রকেট ও কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অ্যামেক্স এ সেবায় যুক্ত হয়েছে।