Thank you for trying Sticky AMP!!

মধ্যপ্রাচ্য সংকটে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রথমেই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়বে। এতে সব ধরনের ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। পণ্য আমদানি-রপ্তানিও ব্যাহত হবে।

ইসরায়েলে ইরান হামলা চালানোর পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। অঞ্চলটিতে নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববাণিজ্য সংকটে পড়বে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফলে এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রথমেই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়বে। এতে ব্যবসার সব ধরনের খরচ বেড়ে যাবে। পণ্য আমদানি-রপ্তানিও ব্যাহত হবে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী আয় আসাও কমে যেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাও বাধাগ্রস্ত হবে।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৭৯৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধ নিতে গত ডিসেম্বরে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।

এর জেরে বড় শিপিং লাইনগুলোর বেশির ভাগ জাহাজই এখন আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে সাগর পাড়ি দিচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্য পরিবহনে আগের চেয়ে সময় বেশি লাগছে।

পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগেই ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েক সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। তারই বদলা হিসেবে ইরান গত শনিবার রাতভর ইসরায়েলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যের বড় অংশে আমাদের আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রভাব পড়বে। কারণ, সৌদি আরবের একাংশ, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পণ্য আনা-নেওয়ায় হরমুজ প্রণালি হয়ে যেতে হয়। জ্বালানি পণ্যের সরবরাহে বেশি প্রভাব পড়বে।

পোশাকশিল্পের মালিকেরা উদ্বিগ্ন

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তাঁরা বলছেন, ইতিমধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে ক্রয়াদেশ কমে যেতে পারে। এতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।

জানতে চাইলে ঊর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক আসিফ আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে সব জায়গায় অস্থিরতা ছড়িয়ে যাবে। তার প্রভাবে পাশ্চাত্যের মানুষেরা যদি কেনাকাটার বাজেট কমিয়ে দেন, তাহলে আমাদের পোশাক রপ্তানিও কমে যাবে।’

আসিফ আশরাফ আরও বলেন, গত ডিসেম্বরে লোহিত সাগরে জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার পর বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ফাস্ট ফ্যাশনের পোশাকের ক্রয়াদেশ তুলনামূলক কম লিড টাইমে (ক্রয়াদেশ থেকে পণ্য জাহাজীকরণের সময়) দিতে শুরু করে। তখন অনেক ক্রয়াদেশ তুরস্কে চলে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে ক্রেতারা অনেক পণ্যই কম লিড টাইমে নিতে চাইবে। তখন চাপ বাড়বে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলেও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশেও রপ্তানি বাড়ছে। পোশাক রপ্তানির শীর্ষ ১০ নতুন বাজারের দুটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরব। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ইউএই ও সৌদি আরবে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩৭ ও ৪৭ শতাংশ।

বিজিএমইএর পরিচালক শামস মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে জটিলতা বাড়ছে। অঞ্চলটির কয়েকটি দেশে আমাদের পোশাক রপ্তানি বাড়ছিল। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে সেখানকার মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দেবে। স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পড়বে। এ ছাড়া দুবাই থেকে আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশি পোশাক যায়। সেখানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে সরাসরি দুটি ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত, জ্বালানির সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হবে। এতে জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম বাড়বে। তাতে দেশেও জ্বালানি প্রাপ্যতা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত, অঞ্চলটিতে অস্থিরতা বাড়লে পণ্যবাহী জাহাজের খরচ ও সময় আরও বাড়বে। এতে ব্যবসার খরচের পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।

মাশরুর রিয়াজ আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ এক বছরের বেশি সময় ধরে চললে সংকট আরও বাড়বে। এ অঞ্চলের সৌদি আরব, ইউএই, বাহরাইনের মতো দেশ বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। দেশগুলো যুদ্ধে না জড়ালেও তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন বাংলাদেশ থেকে নতুন শ্রমশক্তি যাওয়া কমে যাবে। তাতে প্রবাসী আয় কমবে। এ ছাড়া অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।