Thank you for trying Sticky AMP!!

চীনে ‘শুয়ে–বসে থাকা’ তরুণ বাড়ছে, কেন এমন জীবনধারণ

চীনের অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ায় সে দেশের মানুষের মধ্যে নতুন একধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিতে চাঙাভাব কমে যাওয়ার কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে। ফলে দেশটির অনেক তরুণ এখন ‘শুয়ে-বসে থাকা’র নীতি গ্রহণ করেছেন।

তবে বিষয়টি আক্ষরিকভাবে শুয়ে-বসে থাকা নয়। মানুষ নিজের পছন্দের জীবন কাটানোর জন্য যতটুকু কাজ না করলেই নয়, সেটা হলো চীনের পরিভাষায় শুয়ে-বসে থাকা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে এমন কিছু মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যাঁরা জীবনযাপনের এই রীতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন বা হচ্ছেন। সাংহাইয়ের ২৩ বছর বয়সী নারী চু ই তেমন একজন।

দুই বছর আগে চাকরি ছেড়েছেন চু ই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঘন ঘন ওভারটাইম করতে হতো তাঁকে, সেই সঙ্গে বসের প্রতি ছিল ঘৃণা। এখন তিনি এক ভ্রমণ কোম্পানির জন্য সপ্তাহে এক দিন বাসা থেকে কাজ করেন। ফলে নিজের পছন্দের কাজ ট্যাটু করা শিখতে এখন তিনি যথেষ্ট সময় পান। ছয় মাসের কোর্স করে তিনি পূর্ণকালীন ট্যাটুশিল্পী হতে চান।

চু ই একা নন, তাঁর মতো আরও অনেক চীনা তরুণ-তরুণী এখন শুয়ে-বসে থাকার নীতি গ্রহণ করেছেন। ঠিক কতসংখ্যক তরুণ করপোরেট চাকরি না করে এভাবে শুয়ে-বসে থাকার নীতি গ্রহণ করেছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০২৩ সালে চীনে তরুণদের বেকারত্ব অনেকটাই বেড়েছে। গত বছরের জুনে তা ২১ দশমিক ৩ শতাংশে উঠে যায়। চীনের অর্থনীতি এখনো প্রাক্-মহামারি যুগে ফেরত যাওয়ার সংগ্রাম করছে।

চীনের অনেক স্নাতক বলেছেন, এখন তাঁরা নিয়মিত চাকরি ছেড়ে জীবিকা উপার্জনের ভিন্ন পথ খুঁজছেন, অর্থাৎ তাঁরা এ ক্ষেত্রে ছাড় দিচ্ছেন।

চু ই বলেন, ‘আমার কাছে কাজ করার তেমন কোনো মানে নেই। চাকরির অর্থ হলো, বসের জন্য কাজ করা বা তাঁকে খুশি করা, সে জন্য আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’।

১৯৯৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে চীনে প্রায় ২৮ কোটি মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে, যাদের বলা হয় জেন জি। বয়সে তরুণ হলেও তাঁরা চীনের সবচেয়ে নিরাশাবাদী জনগোষ্ঠী।

গত অর্ধ শতকের মধ্যে চীনের অর্থনীতি এখন সবচেয়ে শ্লথগতির সম্মুখীন। এই পরিস্থিতিতে জেন জি–কে সন্তুষ্ট করা চীনের নীতি প্রণেতাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। গত মাসে চীনের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে, তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে আরও তৎপরতা প্রয়োজন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মনে হতে পারে যে তরুণেরা করপোরেট প্রতিযোগিতার ইঁদুর–দৌড় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁদের হতাশা উপেক্ষা করা অসম্ভব।

অর্থনৈতিক শ্লথগতির কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তরুণদের পক্ষে সামাজিক অসমতা ও ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা খুব চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

সে জন্য চুয়ের মতো নারীরা করপোরেট চাপের চেয়ে নিজেদের মঙ্গলকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। নিজেকে এখন তাঁর আগের চেয়ে সুখী মনে হয় এবং এই সিদ্ধান্ত যথার্থ মনে হয়।

চু ই বলেন, ‘আমার এখনকার বেতন অনেক বেশি না হলেও দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের মতো যথেষ্ট; কয়েক হাজার অতিরিক্ত ইউয়ানের চেয়ে নিজের মতো সময় উপভোগ করা অনেক জরুরি’।