Thank you for trying Sticky AMP!!

মাসোহারায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের তথ্য পাচার, বিএসটিআইয়ের এক কর্মচারী বরখাস্ত

মাসে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের তথ্য আগাম পাচার করে দিতেন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) এক কর্মচারী। এ ছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ফি সংগ্রহ করে তা-ও আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এসব নিয়ে অভিযোগে ওই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিএসটিআই।

মো. মাহাফিজুর রহমান নামের ওই কর্মচারী বর্তমানে বিএসটিআইয়ের ল্যাব বাহক হিসেবে রাজশাহী কার্যালয়ে যুক্ত আছেন। তাঁকে বিএসটিআই কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ১৯৮৯-এর ৪৪ (১) ধারা অনুসারে ৮ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মচারী মাহাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান যেটা ভালো মনে করেছে, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগ তো আসতেই পারে। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে। এর বাইরে আমার কিছু বলা নেই।’

বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত মাহাফিজুর রহমান বগুড়া অফিসে থাকাকালে আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পর প্রাতিষ্ঠানিক তদন্ত শেষে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মাহাফিজুরকে সাময়িক বহিষ্কার করে ৮ সেপ্টেম্বর অফিস আদেশ জারি করেছে বিএসটিআই। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. নজরুল আনোয়ার স্বাক্ষরিত ওই অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সোহা-সিনহা ফুড প্রডাক্টস নামের বগুড়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে মাসিক ২ হাজার টাকার বিনিময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তথ্য জানিয়ে দিতেন অভিযুক্ত মাহাফিজুর।

সোহা-সিনহা ফুড প্রডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হানিফ এ নিয়ে বিএসটিআইকে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে তিনি জানান, বগুড়া অফিসে নিবন্ধনের জন্য গেলে মাহাফিজুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। কিন্তু কারখানার পরিবেশ খারাপ হওয়ায় নিবন্ধন দেওয়া যাবে না বলে জানান মাহাফিজুর। একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মামলা থেকে বাঁচতে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে দাবি করেন। সে অনুযায়ী, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে নিয়মিত টাকা দিয়ে আসছিলেন আবদুল হানিফ। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে আবদুল হানিফের কারখানায় হঠাৎ অভিযান চালায় বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধিদল। এ সময় সোহা-সিনহা ফুড প্রডাক্টসকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে মাহাফিজুরের বিরুদ্ধে বিএসটিআইয়ে অভিযোগ দেন আবদুল হানিফ।

এই অভিযোগ ছাড়াও অভিযুক্ত মাহাফিজুরের বিরুদ্ধে কারখানার নিবন্ধনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছে বগুড়ার অপর দুই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বগুড়ার মমতাজ লাচ্ছা সেমাই কারখানা ও মাইসা লাচ্ছা সেমাই কারখানা।

প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকেরা অভিযোগে জানান, বিএসটিআইর নিবন্ধন নবায়নের জন্য তাঁরা বগুড়া অফিসে আবেদন করেন ও নমুনা জমা দেন। এরপর ল্যাব বাহক মাহাফিজুর রহমান তাঁদের কারখানায় গিয়ে রসিদ ছাড়াই বিলের অর্থ বাবদ মোট ৩১ হাজার ৫০০ টাকা বুঝে নেন। পরে রসিদ দেবেন বলে জানান। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিএসটিআই বগুড়া কার্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠান দুটির মালিককে নিবন্ধন নবায়নের মাশুল পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন অভিযুক্ত মাহাফিজুর রহমান তাঁদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা জমা দেননি। তাই মাহাফিজুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠান দুটি।

এসব অভিযোগ সরেজমিন তদন্তের জন্য প্রতিষ্ঠানটির বগুড়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা জুনায়েদ আহমেদকে দায়িত্ব দেয় বিএসটিআই। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে মাহাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তথ্য পাচার, রসিদ ছাড়া টাকা নেওয়া ও বিএসটিআইয়ের ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার কাছেও অর্থ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন মাহাফিজুর।

তদন্তের ভিত্তিতে মাহাফিজুরকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ১৯৮৯-এর ৪৪ (১) ধারা অনুসারে, ৮ সেপ্টেম্বর থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি বিধি অনুসারে খোরপোষ ভাতা পাবেন বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

বিষয়টি নিয়ে বিএসটিআইর মহাপরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শেষে মাহাফিজুরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন বিস্তারিত তদন্ত শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।