Thank you for trying Sticky AMP!!

খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো উঁচু বেশির ভাগ দেশে, লেবাননে ৭১%

মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন লেবাননে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মার্চের গড় হিসাবে দেখা গেছে, লেবাননে এই সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭১ শতাংশ। খাদ্যনিরাপত্তা-বিষয়ক জাতিসংঘের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

লেবাননের পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খাদ্য মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে জিম্বাবুয়েতে। দেশটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৪৫ শতাংশ। এরপর আছে যথাক্রমে মিসর, রুয়ান্ডা ও ইরান। এই দেশগুলোর খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার যথাক্রমে ৩০, ২০ ও ২০ শতাংশ। বিশ্বের অনেক দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এখন দুই অঙ্কের ঘরে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করে। তা সত্ত্বেও জাতিসংঘের খাদ্য মূল্য সূচকের মান এখনো বেশি।

বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসের ৬ তারিখের আগের দুই সপ্তাহে ভুট্টা, গম ও চালের মূল্য বেড়েছে যথাক্রমে ৩, ২ ও ১ শতাংশ। তবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ভুট্টা ও গমের দাম ১৫ ও ৩৭ শতাংশ কম। চালের দাম ১৬ শতাংশ বেশি।

২০২১ সালের জানুয়ারির তুলনায় ভুট্টা ও গমের দাম যথাক্রমে ২৬ ও ৭ শতাংশ বাড়তি। অবশ্য চালের দাম ৫ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়তি। প্রায় সব কটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি। ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের বেশি। একই বাস্তবতা ৯৩ শতাংশ নিম্ন-মধ্যম, ৮৯ শতাংশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে। কোনো কোনো দেশে এই হার ২ অঙ্কের ঘরে উঠে গেছে।

উচ্চ আয়ের দেশগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশ উচ্চ আয়ের দেশে উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ৩০ শতাংশের ওপরও আছে কয়েকটি দেশে।

এদিকে মার্চে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্যের মূল্য সূচক কমেছে। গত বছরের মার্চে এই সূচক রেকর্ড উচ্চতায় ওঠার পর চলতি মার্চে তার মান ২০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু মার্কিন ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের কারণে আমদানিকারী দেশগুলো এর সুবিধা পাচ্ছে না।

মার্চে এফএওর খাদ্য মূল্য সূচক ১২৬ দশমিক ৯-এ নেমে এসেছে। রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর ২০২২ সালের মার্চে এ সূচক রেকর্ড ১৫৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে উঠেছিল। এর পরের চার মাসেও তার মান ১৫০-এর ওপরে ছিল। গত জুলাইয়ে তা ১৪০-এর ঘরে নেমে আসে।
১৯৯০ সালে এফএওর সূচক প্রবর্তনের পর ২০২২ সালে বিশ্বে খাদ্যের দাম ছিল সবচেয়ে বেশি।

খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুখবর হলো, কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্য পরিবহনে রাশিয়া-ইউক্রেনের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি। সর্বশেষবার ৬০ দিনের জন্য এই চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও এই পথে জাহাজ পরিবহনে বেশ কিছু বাধা আছে, যেমন জাহাজ তল্লাশি ও বিমার উচ্চ প্রিমিয়াম। তবে বিশ্ববাজারে খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশ খাদ্য উৎপাদনের চেয়ে আমদানি বেশি করে, তারা যেন স্বল্প মূল্যে খাদ্য কিনতে পারে তা নিশ্চিত করতে বলেছে বিশ্বব্যাংক।

বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম ২০২২ সালে নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে বলেছিল, শহরের প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলো গড়ে মোট খরচের ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে। গ্রামীণ প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলো করে ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বিশ্বের সবখানেই এ চিত্র প্রায় একই রকম। অর্থাৎ খাদ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন প্রান্তিক মানুষেরা।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের মানুষও খাদ্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই পাত থেকে খাবারের পরিমাণ কমাচ্ছেন, এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনচক্রের প্রথম এক হাজার দিনে শিশুরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে গ্রামীণ ভূমিহীন পরিবারের শিশুদের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যেমন তাদের শিক্ষা গ্রহণ ব্যাহত হয়, তেমনি ভবিষ্যতে তাদের কর্মদক্ষতায়ও প্রভাব পড়ে। ফলে তারা জীবনের পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারবে না।

ইউক্রেনের শস্যভান্ডারে ক্ষতি

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়া কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো অবরোধ করে। এতে ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানির ব্যয় বেড়ে যায়। দেশটির কৃষকেরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েন। পৃথিবীর শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত ইউক্রেন বিশ্ববাজারের চাহিদার প্রায় ১২ থেকে ১৪ শতাংশ শস্য সরবরাহ করে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের কৃষির ক্ষতি হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ডলার, যা আগের বছর দেশটির মোট কৃষি উৎপাদনের প্রায় ৭৫ শতাংশ।