Thank you for trying Sticky AMP!!

ইস্পাতের এ পিঠে সুখবর, ও পিঠে নতুন সংকট

বিশ্বজুড়ে দাম বাড়ছে রড তৈরির কাঁচামালের। সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি কমেছে ৪২ শতাংশ। সামনে উৎপাদন অব্যাহত রাখা নিয়ে সংশয়।

করোনাকালে চীনে বিলেট রপ্তানির মধ্য দিয়ে সুখবর দিয়েছিলেন ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা। নতুন রপ্তানি আদেশ নিয়েও আলোচনা চলছিল। কিন্তু এমন সুখবরের উল্টো পিঠেই এখন নতুন সংকটের হাতছানি। কারণ বিশ্বজুড়ে ইস্পাত তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে এবং ঠিকমতো পাওয়াও যাচ্ছে না। তাই এটির আমদানি নিয়ে দেশীয় উদ্যোক্তারা বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানির বদলে অবকাঠামো নির্মাণের আসন্ন মৌসুমে দেশীয় চাহিদা মেটানো নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে।

করোনার ধকল কিছুটা সামলে নিয়ে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি বেড়েছে। আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণ কর্মকাণ্ড আরও জোরদার হবে, এমন আশায় সংশ্লিষ্ট সবাই। রডসহ ইস্পাত পণ্যগুলোর চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। ঠিক এই সময়েই কিনা রড তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিল, যা এই শিল্পে শঙ্কার ছায়া ফেলছে।

প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমের আগে ইস্পাত পণ্যের কাঁচামাল আমদানি ২০-২৫ শতাংশ বাড়ে। তবে এবার উল্টো কমেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৯২ হাজার টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম। উদ্যোক্তারা মনে করেন, আগামী বছরের মাঝামাঝির আগে কাঁচামাল সহজে পাওয়ার আশা কম।

একক খাত হিসেবে ইস্পাত শিল্প খাতে উৎপাদিত পণ্যের বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এই খাতের সঙ্গে সিমেন্ট, রংসহ আরও বহু উৎপাদনমুখী খাতের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে। সে জন্য এই খাতে কোনো সমস্যা হলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও এর বড় প্রভাব পড়ে। আবার দাম বাড়লে অবকাঠামো নির্মাণের ব্যয়ও বেড়ে যায়। করোনার সময় চাহিদা কমায় দাম কমেছে বটে। তবে এখন আর করোনার আগের দামে বিক্রি হচ্ছে না রড। নতুন করে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই খাতে আবার প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এক-দেড় মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরার টনপ্রতি দাম ১০০ ডলার বেড়েছে। দেশে মজুতও গতবারের তুলনায় এবার অনেক কম। এই সংকটে অনেক কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। এ থেকে বের হতে হলে পুরোনো লোহার টুকরা আমদানিতে শর্ত শিথিল ও শুল্ক-কর সাময়িক কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এক-দেড় মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরার টনপ্রতি দাম ১০০ ডলার বেড়েছে। দেশে মজুতও গতবারের তুলনায় এবার অনেক কম।

রড তৈরির কাঁচামাল আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আমদানির তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশ থেকে কনটেইনারে ও পুরো জাহাজ বোঝাই করে কাঁচামাল আমদানি হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় উন্নত দেশগুলো থেকে। কারণ সেখানে পুরোনো অবকাঠামো ভেঙে নতুন উন্নত অবকাঠামো হচ্ছে। ভাঙাভাঙির ফলে পুরোনো লোহার টুকরা পাওয়া যাচ্ছে, যা রড তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সবচেয়ে বেশি পুরোনো লোহার টুকরা আমদানি হয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে। মোট আমদানির ৩০ শতাংশ এসেছে দেশ দুটি থেকে। এ ছাড়া জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও মালয়েশিয়া থেকে পুরোনো লোহার টুকরা আমদানি হয়।

উদ্যোক্তারা জানান, করোনার কারণে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে পুরোনো অবকাঠামো ভেঙে নতুন অবকাঠামো তৈরির কাজে ধীরগতি দেখা দেওয়ায় রড তৈরির কাঁচামালের সরবরাহ কমেছে। আবার অনেক দেশ করোনা সামলে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে। তাতে ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নতুন করে সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীন। সবার আগে দেশটি করোনা সামলে নিয়েছে। সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ায় বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। দেশটি গত অক্টোবরেই পুরোনো লোহার টুকরা আমদানিতে প্রায় দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আকরিক থেকে ইস্পাত উৎপাদন কমে যাওয়ায় চীন এখন বিশ্ববাজার থেকে কাঁচামালও আমদানি করছে। দেশটিতে ইতিমধ্যে ২৫ হাজার টন বিলেট রপ্তানি করেছে চট্টগ্রামের জিপিএইচ গ্রুপ। তবে কাঁচামাল সহজে না পেলে এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে না।

কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, সহজে কাঁচামাল না পাওয়াই এখন মূল সংকট। উৎপাদন চালু রাখতে যা-ই পাওয়া যাচ্ছে, তার জন্যই এখন বুকিং দিচ্ছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। উৎপাদন খরচ বাড়লে বাড়তি চাপ তৈরি হবে এই খাতে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, দেশে স্বয়ংক্রিয় ও সনাতন পদ্ধতির ২২০টি ইস্পাত কারখানা চালু আছে।