Thank you for trying Sticky AMP!!

চরকা টেক্সটাইলের কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। গত শনিবার নরসিংদীর পলাশে

পোশাকে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে প্রাণ গ্রুপ

ঢাকা থেকে পূর্বাচল হয়ে শীতলক্ষ্যার পাড়ে পৌঁছাতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগল। তারপর মিনিট কয়েকের নৌভ্রমণ শেষে চরকা টেক্সটাইল। ততক্ষণে বেলা গড়িয়েছে অনেকখানি। উৎপাদন চলছে পুরোদমে। পেছনের ফটক দিয়ে কারখানায় প্রবেশ করতেই হাতের বাঁয়ে মেডিকেল সেন্টার ও ক্যানটিন পাশে রেখে এগোলাম। চারপাশে বেশ কয়েকটি কারখানা ভবন। মাঝে বিশাল সবুজ মাঠ। আরেক পাশে বড়সড় বাগান।

চরকা টেক্সটাইলের কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। গত শনিবার নরসিংদীর পলাশে

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের আমন্ত্রণে আমরা সাত সাংবাদিক গত শনিবার চরকায় যাই। বাগানের পাশ দিয়ে দোতলায় ডিসপ্লে সেন্টারে তাদের তৈরি করা পোশাকের কিছু নমুনা দেখলাম। কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য নিচে নামতেই ছুটে এলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। কুশল বিনিময় করলেন। তাঁর নেতৃত্বেই আমাদের চরকা ঘুরে দেখার পর্ব শুরু হলো।

চরকার কাটিং সেকশন ঘুরে দেখতে দেখতে আহসান খান চৌধুরী বললেন, ‘পোশাকের ব্যবসা খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে। অপচয় না কমালে মুনাফা সম্ভব নয়। সে জন্য ঝুট কাপড় দিয়ে ম্যাট্রেস বানাচ্ছি, মাস্ক তৈরি করছি। ভবিষ্যতে আমরা ঝুট কাপড় পুনরুৎপাদন করে সুতা ও কাপড় তৈরির পরিকল্পনা করছি।’ ব্যবসা চ্যালেঞ্জিং হলেও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

নরসিংদীর পলাশে ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে চরকা।

নরসিংদীর পলাশে ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে চরকা। কারখানাটিতে ব্রা, প্যান্টি, বক্সার, স্যান্ডো গেঞ্জিসহ বিভিন্ন ধরনের অন্তর্বাস তৈরি হয়। তার বাইরে টি–শার্ট, পোলো শার্ট, লেগিংস, হুডিসহ বিভিন্ন ধরনের নিট পোশাকও তৈরি হচ্ছে। সেসব পোশাক যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ডলার বা ৭৬৫ কোটি টাকা।

চরকায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৫১ শতাংশ নারী। বাকি ৪৯ শতাংশ পুরুষ। দুই হাজার শ্রমিকের থাকার জন্য আছে ডরমিটরি। আর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব শ্রমিক আসা-যাওয়া করেন, তাঁদের জন্য বাস রয়েছে। শ্রমিকদের পাঁচ টাকার বিনিময়ে দুপুরের খাবার সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ। আবার বিনা মূল্যে চিকিৎসাসুবিধা দেওয়ার জন্য আছে মেডিকেল সেন্টার। এ ছাড়া উৎপাদনে দক্ষ শ্রমিকদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে কারখানার বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে ঘুরে দেখছি আমরা। আমাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কর্মীদেরও খোঁজখবর নিচ্ছেন আহসান খান চৌধুরী। হঠাৎ খেয়াল করলাম, তিনি হাঁটতে হাঁটতে এক নারী নিরাপত্তাকর্মীকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেমন আছেন?’ জবাবে সেই কর্মীও সালাম দিয়ে বললেন, ‘স্যার ভালো আছি।’ আহসান খান চৌধুরী সামনে চলে গেলে লিমা নামের সেই কর্মীর কাছে জানতে চাইলাম, ‘আপনার স্যার কি প্রায়ই আপনাদের কুশল জানতে চান।’ হাসি মুখে বললেন, ‘স্যার যখনই এদিকে আসেন, তখনই কুশল জিজ্ঞাসা করেন। আমার খুব ভালো লাগে।’

চরকায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন।

কারখানা পরিদর্শন শেষে ডিসপ্লে সেন্টারে আবারও আহসান খান চৌধুরীর সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা হলো। তিনি জানালেন, আগামী দিনে পোশাক খাত আরও ভালো করবে। রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে। করোনার প্রভাব কেটে যেতেই প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। সম্ভাবনা থাকায় বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। শিগগিরই চরকা দুই শিফটে চলবে। সে জন্য প্রস্তুতি চলছে। যদিও শ্রমিকসংকট রয়েছে। তবে আগামী ২ বছরের মধ্যে ২০ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চরকা এগোচ্ছে।