Thank you for trying Sticky AMP!!

বাজার বড় হচ্ছে ভারতে

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে দেশটিতে ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৮% বেশি।

করোনার মধ্যেও বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৩৬ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে, দেশীয় মুদ্রায় যা ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার সমান। ভারতের বাজারে এই রপ্তানি আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) একই সময়ের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি।

পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভারতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্র্যান্ড-সচেতনতা। এ কারণে সেখানে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। আবার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোও দেশটিতে নতুন নতুন বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। পরের বছর করোনার কারণে সেই রপ্তানিতে ধাক্কা লাগে। টানা দুই অর্থবছর ৪২ কোটি ডলার করে মোট ৮৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছর অমিক্রনের শঙ্কার মধ্যেও প্রথম ৬ মাসেই প্রায় ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পোশাকের মূল্য আগের চেয়ে কিছুটা বাড়তি। তারপরও ভারতের বাজারে রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি রপ্তানি হওয়া পোশাকের পরিমাণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্যোক্তারা কাঁচামালের সরবরাহব্যবস্থায় সমস্যা ও শ্রমিক-সংকটের কারণে বহু ক্রয়াদেশ নিতে পারেননি। তবে শেষ পর্যন্ত ভারতে যেটুকু রপ্তানি আয় হয়েছে, সেটিকে ভালো বলতে হবে।’

জানা যায়, ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়। যদিও সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। ২০১১ সালের দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরে পোশাকের নামীদামি বিদেশি অনেক ব্র্যান্ড বিক্রয়কেন্দ্র খোলায় তাতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।

ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। সেবার রপ্তানি হয় ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য। পরের বছর করোনার কারণে রপ্তানিতে ধস নামে। তবে এক বছরের ব্যবধানেই অবশ্য ধস কাটিয়ে ওঠে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ায়। তাতে গত অর্থবছর রপ্তানি হয় ১২৭ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সব মিলিয়ে রপ্তানি হয়েছে ১০৬ কোটি ডলারের পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক ৩৪ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল, দুই বছরের মধ্যে ৩০০টি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড ভারতে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করছে। কারণ, দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ১৯ শতাংশ হারে বাড়বে, যা কিনা চীন, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর তুলনায় দ্রুত। ২০২২ সালে ভারতের কাপড়ের বাজার হবে ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো এশিয়ায় সিঙ্গাপুর, হংকং ও কোরিয়ার পর ভারতকে সম্ভাবনাময় মনে করছে। যদিও করোনার কারণে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো ভারতে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার ক্ষেত্রে ধীরে এগোচ্ছে। তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেই তারা বিনিয়োগ করবে। যেহেতু ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে আমরা দীর্ঘদিন ব্যবসা করছি, ফলে আমাদের সুযোগ থাকবে। তা ছাড়া বিদেশ থেকে কাপড় আমদানি করে সেখানকার স্থানীয় বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদনে অনেক শুল্ক দিতে হয়। সে কারণে বাংলাদেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভালো মানের শার্ট, স্যুট ও প্যান্ট বেশি আমদানি করছে ভারতের স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো।’

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাবে বাংলাদেশ। সেটি হলে অন্যান্য দেশের মতো ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। সেই সময় পণ্য রপ্তানির ঊর্ধ্বমুখী ধারা ধরে রাখতে করণীয় বিষয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘দেশটির সঙ্গে আমাদের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হবে। সে জন্য এখন থেকেই সরকারি পর্যায়ে দেনদরবার করা প্রয়োজন।’