Thank you for trying Sticky AMP!!

বিধিনিষেধের আওতামুক্ত, তবু দুশ্চিন্তা

উৎপাদন চালানোর সুযোগ পেলেও শ্রমিকসংকটে পড়েছে অনেক কারখানা। আবার সহযোগী শিল্পকারখানা খোলা না থাকায় মোড়কপণ্যে টান পড়বে।

বেলা বিস্কুট জনপ্রিয় হয়েছে গণি বেকারীর হাত ধরেই।

দুই সপ্তাহের চলমান কঠোরতম বিধিনিষেধে হাতে গোনা যে কয়েকটি খাতকে আওতামুক্ত রাখা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যশিল্প। তবে উৎপাদন চালানোর সুযোগ পেলেও শ্রমিকসংকটে পড়েছে এ খাতের অনেক কারখানা। আবার সহযোগী শিল্পকারখানা খোলা না থাকায় শিগগিরই প্যাকেজিং বা মোড়কপণ্যে টান পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খাতটির ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে রপ্তানি ক্রয়াদেশও প্রচুর। তবে করোনাকালে জাহাজভাড়া কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি গত মাস থেকে কনটেইনারের সংকটে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ এ খাতে নতুন সংকট তৈরি করবে। সময়মতো পণ্য দিতে না পারলে ক্রেতারা মূল্যছাড়ের সুবিধা চাইবে।

করোনা মহামারির মধ্যেই এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলকে পৌঁছে গেছে কৃষিপণ্য। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলারের বা ৮ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের হিস্যাই বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ১০ বছর আগেও কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ৪০ কোটি ডলার। চার বছর ধরে খাতটির রপ্তানি আয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যদিও করোনার কারণে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় ৫ শতাংশ কমেছিল। আবার করোনার মধ্যেও সর্বশেষ অর্থবছরে খাতটির রপ্তানি আয় ১৯ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) তথ্যানুযায়ী, সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৬৯। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে তিন শ প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি বড়-মাঝারি প্রতিষ্ঠানসহ ২০০টির মতো কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুর জাতীয় শুকনা খাবার, ভোজ্যতেল ও সমজাতীয় পণ্য, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের মসলা, পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি।

কাঁচামাল নিয়ে সমস্যা না হলেও মোড়কীকরণ পণ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ, প্যাকেজিং কারখানা বন্ধ। আপাতত ৪-৫ দিন সমস্যা না হলেও পড়ে সংকটে পড়তে হবে।
ছৈয়দ মুহাম্মদ শোয়াইব হাছান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হিফস অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি

ঈদের ছুটি শেষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হিফস অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি গতকাল শনিবার উৎপাদন শুরু করেছে। তবে লকডাউনের কারণে কারখানার আশপাশের শ্রমিকদের দিয়েই সীমিত পরিসরে উৎপাদন চালাতে বাধ্য হচ্ছে।

হিফস অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছৈয়দ মুহাম্মদ শোয়াইব হাছান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলমান বিধিনিষেধের কারণে আমাদের মতো অনেক কারখানাই ছোট পরিসরে উৎপাদন চালাচ্ছে। আবার অনেক শ্রমিক ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে আটকা পড়েছে।’ তিনি বলেন, কাঁচামাল নিয়ে সমস্যা না হলেও মোড়কীকরণ পণ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ, প্যাকেজিং কারখানা বন্ধ। আপাতত ৪-৫ দিন সমস্যা না হলেও পড়ে সংকটে পড়তে হবে।

ছৈয়দ মুহাম্মদ শোয়াইব হাছান আরও বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় বর্তমানে প্রচুর ক্রয়াদেশ আছে। তবে সময়মতো ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য দিতে না পারলে ক্রেতারা মূল্যছাড় দাবি করবে। তখন লোকসানে পড়তে হবে।

কৃষিপণ্যের রপ্তানির বড় অংশই করে প্রাণ গ্রুপ। বিদায়ী অর্থবছরে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি ডলার। ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু করা এই শিল্পগোষ্ঠী বর্তমানে ১৪৫টি দেশে পৌঁছে গেছে। ফ্রুট ড্রিংক, পানীয়, বিস্কুট, সস, নুডলস, জেলি, মসলা, সুগন্ধি চাল, পটেটো ক্র্যাকার, চানাচুর, ঝাল-মুড়ি ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।

জানতে চাইলে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের জন্য কনটেইনার মিলছে না। কারণ, বড় আকারের জাহাজ বা মাদার ভেসেল চীন থেকে কনটেইনার ভর্তি হয়ে কলম্বো বন্দরে আসছে। জায়গা খালি না থাকার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার জাহাজে পণ্য নিতে চাচ্ছে না। আবার জাহাজভাড়াও চার গুণ বেড়ে গেছে। ফলে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাপার সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে চলমান লকডাউনের আওতামুক্ত রাখায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কাল বা পরশু থেকে অধিকাংশ কারখানা খুলবে। পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে শ্রমিকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি প্যাকেজিং কারখানা চালু করার সুযোগ দিলে যে উদ্দেশ্যে খাতটিকে বিধিনিষেধের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে, সেটি সফল হবে।