Thank you for trying Sticky AMP!!

সব শ্রমিক বেতন-বোনাস পাননি

বেতন–বোনাস না পাওয়ায় করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেও কিছু শ্রমিককে নিরানন্দ ঈদ কাটাতে হতে পারে।

গজারিয়ার পোশাকশিল্প পার্কে ব্যস্ত সময় কাটছে পোশাককর্মীদের

প্রতিবার ঈদেই গুটিকয়েক পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বেতন বা বোনাস পান না। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। ঈদের আগে গতকাল সোমবার শেষ কর্মদিবসেও কয়েকটি কারখানা শ্রমিকের বেতন বা বোনাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেও কিছু শ্রমিককে নিরানন্দ ঈদ কাটাতে হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক পোশাক কারখানায় গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত বেতন ও ভাতা পরিশোধ করেছে। তবে গাজীপুরের স্টাইলক্রাফট কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। বেশ কিছুদিন ধরেই কারখানাটির শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। অন্যদিকে মিরপুরের ফ্রেবটেক্স নামের একটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন-বোনাস পাননি। কারখানাটির মালিকপক্ষের কোনো খোঁজ না মিলছে না। তাই কারখানাটির শ্রমিকেরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়টি তদারকি করে শিল্প পুলিশ। তাদের হিসাবে, এই ছয় অঞ্চলে পোশাক ও বস্ত্রসহ মোট কারখানা আছে ৭ হাজার ৮২৪টি। তবে গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত ৪৪৭ কারখানা গত জুন মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। আর বোনাস দেয়নি ৮৫১ কারখানা। তার মানে ৯৪ শতাংশ কারখানা গত মাসের বেতন এবং ৮৯ শতাংশ কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে।

অবশ্য তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাদের সচল কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৯১২। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১ হাজার ৯০৭টি কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ৫টি কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে অধিকাংশ পোশাকসহ অন্য কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ করলেও গতকাল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ৫০টিতে বাকি ছিল। তার মধ্যে পোশাক কারখানা ২০টি।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের পরিদর্শক বশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৯৭৩টি পোশাকসহ মোট কারখানা ১ হাজার ৭৮৫টি। তার মধ্যে ৫০টি কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, কাঁচপুর এলাকার সিনহা গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে কিছুটা ঝামেলা আছে।

আরএমজিবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) সভা গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। মালিক, শ্রমিক ও সরকারপক্ষের সেই সভা শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের গত জুনের বেতন ও ঈদ বোনাস ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করার আহ্বান জানান।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সদস্য কারখানার মধ্যে শুধু মিরপুরের ফ্রেবটেক্স নামের একটি কারখানার বেতন-বোনাস হয়নি। কারখানাটির মালিকপক্ষের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ অন্যদিকে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘আমাদের সদস্য কারখানাগুলো বেতন-ভাতা দিয়ে ঈদের ছুটি দিয়েছে। কেবল গাজীপুরের স্ট্যাইলক্রাফটে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বাকি। সেটি সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা।

ছুটি নিয়ে অনিশ্চয়তায় শ্রমিকেরা

ঈদের পর সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউনে একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যেই বাড়ি যাচ্ছেন পোশাকশ্রমিকেরা। কারণ, অধিকাংশ কারখানা আগের মতোই ৪ থেকে ৭ দিনের ছুটি দিয়েছে। কিছু কারখানা অবশ্য বিধিনিষেধের কথা মাথায় রেখে নোটিশ দিয়েছে, ঈদের পর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানা খুলবে।

ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রপ্তানিমুখী পোশাক ও বস্ত্র কারখানা চালু রাখার দাবি করেছিলেন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ পাঁচ ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল বিকেলে নতুন করে যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, সেখানেও পোশাকসহ বেশির ভাগ শিল্পকারখানা বন্ধের বিষয়ে কোনো ঘোষণা ছিল না। ফলে নতুন করে নির্দেশনা না দিলে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পোশাকসহ শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে। যদিও বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতাদের প্রত্যাশা ছিল, করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার সুযোগ দেবে সরকার। এমন বার্তা নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেন তাঁরা। সে কারণে ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে কারখানার মালিকেরা কৌশলী হয়ে সাধারণ ছুটি দেন।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারব না। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যখন বিধিনিষেধ শিথিল হবে তখনই কারখানা খোলা হবে।’

পোশাক শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক কারখানা ৪-৭ দিন ঈদের ছুটির পর কারখানা খোলার নোটিশ দিয়েছে। ফলে একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে শ্রমিকেরা বাড়ি যাচ্ছেন।’