Thank you for trying Sticky AMP!!

বেশি ঋণ করে সিলেটের মানুষ

সর্বশেষ ১২ মাসের মধ্যে পরিবারের অন্তত একজন সদস্য ঋণ নিলে ওই পরিবারকে ঋণ গ্রহণকারী পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ছয় বছর আগের তুলনায় ঋণগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবারপ্রতি ধার বা ঋণের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সারা দেশের মানুষই নানা কারণে ঋণ নিলেও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন সিলেট অঞ্চলের মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে সিলেটে প্রায় ৪৯ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য ঋণ নিয়েছেন। আর সবচেয়ে কম ঋণ নিয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগের মানুষ। ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই হার প্রায় ২৯ শতাংশ।

প্রয়োজনে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেয় মানুষ। কেউ সংসার চালাতে ঋণ নেন, কেউবা চিকিৎসা খরচ চালাতে টাকা নেন, আবার অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে ঋণ নেন। জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ১২ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০২২ সালে পরিবারের অন্তত একজন সদস্য ঋণ নিলে ওই পরিবারকে ঋণ গ্রহণকারী পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, খুলনায় সাড়ে ৪৬ শতাংশ, বরিশালে ৪৬ শতাংশ, রাজশাহী ৪২ শতাংশ, রংপুরে ৪০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩২ শতাংশ এবং ঢাকায় ৩১ শতাংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত। অর্থাৎ এসব পরিবারের সদস্যরা ২০২২ সালে ঋণ গ্রহণ করেছেন।

২০২২ সালের সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে মোট পরিবার বা খানার সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ। বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুসারে, দেশের ৩৭ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত। সেই হিসাবে ১ কোটি ৫১ লাখ পরিবার ২০২২ সালে ঋণ নিয়েছিল।

আগের খানা আয় ও ব্যয় জরিপটি করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই জরিপের তথ্য অনুসারে, তখন ধার বা ঋণ করে চলছিল ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশ পরিবার। ফলে দেখা যাচ্ছে, ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে ঋণগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখের বেশি।

বিবিএসের জরিপটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একটি পরিবার নানা ধরনের সংকটে পড়তে পারে। যেমন বন্যা-খরাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংসার চালানোর খরচে টান; চিকিৎসা, শিক্ষা খরচ ইত্যাদি। এসব কারণে অনেক সময় একটি পরিবারকে ঋণ নিতে হয়। আবার কেউ কেউ বিয়েশাদির মতো উৎসব–পার্বণের জন্যও ঋণ নেন। ব্যবসা করতেও ঋণের প্রয়োজন হয়। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, মহাজনসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোভিড এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের নিম্ন আয় এবং নিম্নমধ্যম আয়ের পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে। তাদের মধ্যে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কারণ, এসব পরিবারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণে সুদের হার তুলনামূলক কম। তবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদের হার বেশি হওয়ায় ঋণগ্রহীতা সেই ঋণ পরিশোধ করতে আবার ঋণ নেন। এতে তাঁরা অনেক সময় ঋণের দুষ্টচক্রে পড়েন।

পরিবারের গড় ঋণ

বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয়ের জরিপ অনুসারে, দেশের ৩৭ শতাংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত। শুধু এসব ঋণগ্রস্ত পরিবারের তথ্য বিবেচনায় নিলে তাদের গড় ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৮ টাকা। গ্রামাঞ্চলে পরিবারপ্রতি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪ হাজার ২০ টাকা এবং শহরে ৪ লাখ ১২ হাজার ৬৩৮ টাকা।

জরিপে দেখা গেছে, এই হিসাবে ঢাকা বিভাগের ঋণগ্রস্ত পরিবারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, প্রায় চার লাখ টাকা। অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগে এমন পরিবারের ঋণ সবচেয়ে কম, পরিমাণের দিক থেকে তা ৮৮ হাজার টাকার কিছু বেশি।

তবে দেশের সব পরিবারকে বিবেচনায় নিয়ে পরিবারপ্রতি ঋণের একটি হিসাবও দেওয়া হয়েছে বিবিএসের জরিপে। এতে বলা হয়েছে, ২০২২ সাল শেষে পরিবারপ্রতি গড় ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। ২০১৬ সালে জরিপ অনুযায়ী, সে সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৭৪৩ টাকা। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে পরিবারপ্রতি ধার বা ঋণের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

বিবিএসের জরিপের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে গ্রামের মানুষের চেয়ে শহরের মানুষই বেশি টাকা ধার করেছেন। দেশের সব খানা বা পরিবার বিবেচনায় নিয়ে বিবিএসের জরিপে দেখানো হয়েছে, এ সময় শহরাঞ্চলে পরিবারপ্রতি গড় ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৬ টাকা। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে পরিবারপ্রতি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ১১১ টাকা।

কোভিড মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এর প্রভাব দেশেও পড়ে। পাশাপাশি দেখা দেয় ডলার-সংকট। সরবরাহব্যবস্থায় সংকট ও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বৃদ্ধি পায় মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, এর ফলে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষকে বাধ্য হয়ে ঋণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায়, গত বছর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও মানুষের ধার করা বেড়েছে।