Thank you for trying Sticky AMP!!

৬ মাসে বন্ধ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে ৫ গুণ

ডিএসইতে গত ৩০ ডিসেম্বর ইমাম বাটনের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৪ টাকা। গতকাল দিন শেষে এ শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৩ টাকায়।

শেয়ারবাজার

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ও মানহীন এক কোম্পানির শেয়ারের দাম মাত্র ছয় মাসে পাঁচ গুণ হয়ে গেছে। ছয় মাস ধরেই টানা বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম। অথচ এ কোম্পানি ২০১০ সালের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এমনকি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে কারখানার উৎপাদনই বন্ধ রয়েছে। অবিশ্বাস্য ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিটি হলো ওষুধ ও রসায়ন খাতের ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম টানা বেড়ে চলেছে। গত ৩০ ডিসেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২৪ টাকা ১০ পয়সা। আর গতকাল বুধবার লেনদেন শেষে এটির বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ টাকা ৬০ পয়সা। সেই হিসাবে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে এটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪৫০ শতাংশ বা ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। তাতে যার হাতে কোম্পানিটির এক হাজার শেয়ার ছিল, ছয় মাসের ব্যবধানে তিনি হয়ে গেছেন লাখপতি। কারণ, গত ৩০ ডিসেম্বরের বাজারমূল্য অনুযায়ী, এক হাজার শেয়ার কিনতে লেগেছিল মাত্র ২৪ হাজার ১০০ টাকা। আর গতকাল সেই শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ টাকা। বিনিয়োগের ২৪ হাজার ১০০ টাকা বাদ দিলে এক হাজার শেয়ারে শুধু মুনাফা দাঁড়ায় ১ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা। সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতির বিবেচনায় এ মুনাফাকে অবিশ্বাস্য ও অস্বাভাবিকই মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বন্ধ একটি কোম্পানির শেয়ারের এমন মূল্যবৃদ্ধি কারসাজি ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আবার এভাবে একটানা একটি কোম্পানির শেয়ারের এমন মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। আবার এভাবে মূল্যবৃদ্ধির পরও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসইর বিরুদ্ধে সমালোচনাও রয়েছে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে। আবার ছয় মাস ধরে মানহীন এ কোম্পানির এভাবে মূল্যবৃদ্ধির পরও কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

ছয় মাস ধরে একটানা মূল্যবৃদ্ধির পরও এত দিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন কোনো ব্যবস্থা নিল না, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। আর দেরি না করে এখনই দ্রুত তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসি

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্ধ ও নিম্নমানের একটি কোম্পানির এ রকম মূল্যবৃদ্ধি দুর্লভ ঘটনা। ছয় মাস ধরে একটানা মূল্যবৃদ্ধির পরও এত দিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন কোনো ব্যবস্থা নিল না, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। আমি মনে করি, আর দেরি না করে এখনই দ্রুত তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তাতে কারসাজির কোনো প্রমাণ মিললে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি তদন্তে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করা উচিত।’

ইমাম বাটন ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৭৭ লাখ শেয়ারে বিভক্ত। কোম্পানিটির ৭৭ লাখ শেয়ারের মধ্যে প্রায় ৬১ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। চট্টগ্রামভিত্তিক কোম্পানিটি শুরু থেকে পোশাক খাতের জন্য বোতাম তৈরি করে আসছে। ২০১৯ সালের পর থেকে কোম্পানিটি কোনো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে না। কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন রয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ২০২০ সালের পর থেকে উৎপাদনেই নেই এটি।

কিছু দিন ধরেই কোম্পানিটির লেনদেনকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। কোম্পানিটির শেয়ার কেনাবেচা-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ রেজাউল করিম নির্বাহী পরিচালক, বিএসইসি

গতকাল বুধবার এক দিনেই ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৮ শতাংশ বা ১০ টাকা বেড়েছে। হাতবদল হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার শেয়ার, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ৩ শতাংশ। যার বাজারমূল্য ছিল ৩ কোটি টাকা।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বল্প মূলধনি কোম্পানি হওয়ায় এটির শেয়ার নিয়ে খুব সহজেই কারসাজি করা সম্ভব। কয়েকজন মিলে বাজার থেকে অল্প কিছু শেয়ার কিনলেই কৃত্রিমভাবে এটির দাম বাড়ানো সম্ভব। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে এটির শেয়ারের দাম।

এ রকম মূল্যবৃদ্ধির পরও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কেন কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই কোম্পানিটির লেনদেনকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। অফলাইনে কোম্পানিটির শেয়ার কেনাবেচা-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে আনুষ্ঠানিক তদন্তসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী মনে করেন, বাজারে কারসাজি বন্ধ করতে হলে কারসাজিকারকদের শুধু আর্থিক জরিমানা করলে চলবে না, তদন্তে যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় এবং আইন বিধান যদি থাকে, তবে কিছু কারসাজিকারককে জেলে পাঠিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত।