Thank you for trying Sticky AMP!!

শেয়ার ছাড়বে ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার

শেয়ার ছেড়ে পাঁচ কোটি টাকা তোলার অনুমতি চেয়ে কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে আবেদন করেছে।

ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাকসেসরিস লিমিটেডের কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা

রপ্তানিমুখী চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠান ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাকসেসরিস লিমিটেড ৫০ লাখ শেয়ার ছেড়ে দেশের শেয়ারবাজারে থেকে পাঁচ কোটি টাকা তুলতে চায়। এ জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছে।

ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাকসেসরিস কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফার (কিউআইও) পদ্ধতিতে শেয়ার ছেড়ে টাকা তুলতে চায়, যা অনেকটা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও ছাড়ার মতো। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি শেয়ারের ফেসভ্যালু বা অভিহিত মূল্য হবে ১০ টাকা। প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারের এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে গ্রিন ডেলটা ক্যাপিটাল লিমিটেড (জিডিসিএল)।

২০১৭ সালে একটি রপ্তানিমুখী কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাকসেসরিস। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় প্রায় এক লাখ বর্গফুট জায়গায় কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই কারখানায় বর্তমানে সাড়ে সাত শর বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার জোড়া জুতা রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সাদাত হোসেন সেলিম, প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার

পরিচালনায় রয়েছেন যাঁরা

ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হলেন সাদাত হোসেন সেলিম, আর চেয়ারম্যান রেজিনা বেগম। কোম্পানিটিতে ছয়জন পরিচালক আছেন। তাঁরা হলেন সারা হোসেন, রুমানা বেগম, মাহে আলম, সাবরিনা জামান, মো. জহিরুল ইসলাম ও আবু সাঈদ।

সাদাত হোসেন সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে যেসব জুতা পাওয়া যায়, তার ৮০ শতাংশই সিনথেটিক বা কৃত্রিম চামড়া দিয়ে তৈরি। ফলে দেশীয় চামড়ার পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। সে জন্যই চামড়াজাত পণ্য তৈরির এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

দিনে ১৫ হাজার জোড়া জুতা তৈরি

ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের কর্মকর্তারা জানান, চামড়ার জুতা তৈরির প্রক্রিয়াটি ন্যূনতম ছয়টি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। চামড়া এনে প্রথমে কারখানার বন্ডেড ওয়্যারহাউসে রাখা হয়। গ্রাহকের চাহিদা ও জুতার নকশা অনুসারে কর্মীরা সেই চামড়া কাটেন ও এর পুরুত্ব কমান। এরপর তা দিয়ে জুতার ওপরের অংশ সেলাই করা হয়। অন্যদিকে আলাদা যন্ত্রে বানানো হয় জুতার সোল বা তলা। তখন লাস্টিং বিভাগে উভয় অংশ জোড়া দেওয়া শেষে জুতা বিক্রি বা রপ্তানির জন্য মোড়কজাত করা হয়।

কোম্পানিটির অপারেশন বিভাগের পরিচালক মাহে আলম জানান, এই কারখানায় দৈনিক এক পালায় ১৫ হাজার জোড়ার বেশি জুতা তৈরি হয়।

ছয় দেশে পণ্য রপ্তানি

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে উন্নত যন্ত্রপাতি এনে স্থাপন করা হয়েছে ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের কারখানায়। প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়েছে ইতালি, জার্মানি ও চীন থেকে। তবে পণ্য উৎপাদনে তারা ইতালির উৎপাদনব্যবস্থাই অনুসরণ করে।

কোম্পানিটির পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম জানান, তাঁদের কারখানায় দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ নকশাকারকেরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন নকশা করে দেন। চামড়া খাতের বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পাওয়া চট্টগ্রামের ট্যানারি রিফ লেদারসহ এশিয়ার সেরা কয়েকটি ট্যানারি থেকে চামড়া আনা হয়।

গ্রাহকদের জন্য ফরমাল, ক্যাজুয়াল, অক্সফোর্ড, মোকাসিন, ডার্বি, হাইহিল, পামিসহ বিভিন্ন ধরনের জুতা বানায় ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার। বর্তমানে ইতালি, জার্মানি, সুইডেন, স্পেন, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস—এই ছয় দেশে জুতা রপ্তানি করছে ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার। কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে পণ্যের মান ও কারখানার পরিবেশ বিষয়ে দুটি আইএসও সনদ পেয়েছে।

কোম্পানিটির এমডি সাদাত হোসেন সেলিম জানান, ‘আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ ১ কোটি ২০ লাখ ডলারে নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। এ জন্য পৃথক ওয়্যারহাউস ও নতুন কারখানা ভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যাংকঋণ আছে। ব্যাংকও সুদহার বাড়াচ্ছে। এসব কারণে পুঁজিবাজারে আসতে চাচ্ছি।’