Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্পদের উৎস কী

সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর যুক্তরাজ্যের নতুন রাজা হয়েছেন তৃতীয় চার্লস। সম্প্রতি তাঁর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে নেট মাধ্যমে। দেখা যায়, চার্লসের সামনে যে টেবিলটি ছিল, সেই টেবিলে রাখা একটি কলম সরাতে এক কর্মীকে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। নিজের হাতে সরাচ্ছেন না। ভিডিও দেখে অনেকে প্রশ্ন করেছিলেন, তবে কি সিংহাসনে বসেই তাঁর ঠাট বেড়ে গেল। 

তবে এখন আর রাজতন্ত্র নেই। স্বাভাবিকভাবেই রাজতন্ত্রের সেই ঠাটও নেই, রাজা এখন নিছক সাংবিধানিক রাজা। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। আগে যেমন মানুষ রাজাকে কর দিত, এখন দেয় সরকারকে। কিন্তু রাজপরিবারের বিলাস–ব্যসনে তেমন পরিবর্তন আসেনি। 

বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে শুরু করে সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রিয় বারমোলার প্রাস—সব মিলিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের মোট ২৩টি প্রাসাদ আছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে বছরে খরচ হয় ৫ কোটি পাউন্ড। রাজপরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৬৭ কোটি পাউন্ড। এই সম্পদের উত্তরাধিকার হয়েছেন নতুন রাজা চার্লস। সেই সঙ্গে রানির দুর্গ, রত্ন, শিল্পকর্ম ও ঘোড়ার খামারের উত্তরাধিকার হয়েছেন তিনি। আর এ সবকিছুই করমুক্ত। ১৯৯৩ সালের ব্রিটিশ সরকারের এক আইনের বলে একজন সার্বভৌম ক্ষমতার শাসকের কাছ থেকে আরেকজন সার্বভৌম শাসকের কাছে সম্পদ হস্তান্তরের সময় তা করমুক্ত। 

ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে সভরিন গ্র্যান্ট বা সার্বভৌম অনুদান। বিষয়টি হচ্ছে, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে রাজপরিবারের অনেক সম্পদ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে, যাকে বলে ক্রাউন এস্টেট। এর মধ্যে জমি আছে ১ দশমিক ১৬ লাখ হেক্টর। এসব জমিতে কৃষিখামারসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা আছে। সেখান থেকে যে আয় আসে, তা প্রথমে সরকারের রাজস্ব বিভাগে জমা হয়। তা থেকে একসময় ১৫ শতাংশ অর্থ সার্বভৌম অনুদান হিসেবে দেওয়া হতো।

২০১৬-১৭ সাল থেকে আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করা হয়। এটা হিসাব করা হয় সাধারণত দুই বছর আগের আয়ের ওপর। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজপরিবার এ বাবদ ৮ কোটি ৬৩ লাখ পাউন্ড পেয়েছে, যা আদতে ২৫ শতাংশেরও বেশি।

এ ছাড়া ডাচি (ডিউকের জমিদারি) হিসেবে নেট যে রাজস্ব আয় হয়, তা সরাসরি রাজার হিসাবে যায়। এই অর্থ দিয়ে অন্যান্য আনুষ্ঠানিক খরচ নির্বাহ করা হয়, যাকে বলে প্রিভি পার্স। বর্তমানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের দুটি ডাচি আছে—ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার ও ডাচি অব কর্নওয়াল। ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টার সরাসরি রাজার অধীনে থাকে, অর্থাৎ এখান থেকে যে আয় হয়, তা রাজার ব্যক্তিগত আয়। এতে রাজার ১৮ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমি আছে। ৭০০ বছর ধরে এটি রাজার ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে কৃষিখামার, আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবন আছে। মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড। ২০২১-২২ সালে এই দুটি ডাচি থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয় হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড। এ ছাড়া লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে রাজার আরও কিছু সম্পদ আছে, যেগুলো প্রিভি পার্সের অন্তর্গত। রাজপরিবারের সদস্যদের খরচ এই প্রিভি পার্স থেকে নির্বাহ করা হয়। 

রাজপরিবারের সবচেয়ে দৃশ্যমান সম্পদ হচ্ছে অমূল্য রত্নভান্ডার, যার মধ্যে ভারতীয় কোহিনুরও আছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাব অনুসারে, যার সামগ্রিক মূল্য ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৭০ কোটি ডলার। রাজপরিবারের অন্যান্য সংগ্রহ প্রদর্শনী থেকেও আয় হয়। ২০২১-২২ সালে এ বাবদ আয় হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড। এ ছাড়া সদ্য প্রয়াত রানি এলিজাবেথের ১০০টির বেশি ঘোড়া ছিল, যেগুলো তিনি বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় পাঠাতেন। সেখান থেকেও তিনি ৯০ লাখ পাউন্ড আয় করেছেন। 

একসময় বলা হতো, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্যাস্ত হয় না। ফলে সারা বিশ্বের ধনসম্পদ দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এই রাজপরিবার। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিধি এখন অনেক ছোট হয়ে এলেও রাজপরিবার নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। সম্প্রতি রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর পর আবার মানুষের আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল। এ জন্য রাজপরিবারের সম্পদ নিয়েও সংবাদ প্রকাশের হিড়িক। 

সূত্র: ফোর্বস, বিবিসি