Thank you for trying Sticky AMP!!

সঞ্চয়পত্র ভেঙে সংসার চলে, পূরণ হয় বিশ্বব্যাংক–আইএমএফের শর্ত

সঞ্চয়পত্র

বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা পাওয়ার শর্ত হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সরকারকে রাশ টানতে হবে এবং আগামী অর্থবছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র প্রকৃত বিক্রি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। তাই ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ২০ হাজার কোটি টাকায় কমানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রি কমানোর এই শর্ত দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের (ডিপিসি) আওতায় বাজেট সহায়তা পেতে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। পরের তিন বছরে তা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

কোভিডের প্রভাব কাটাতে এবং টেকসই উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ডিপিসি কর্মসূচির মাধ্যমে ৭৫ কোটি ডলার পেতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছ বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে দুই কিস্তিতে ৫০ কোটি ডলার মিলেছে। তবে শেষ কিস্তির অর্থ এখনো মেলেনি। আগামী জুনের মধ্যে বাকি ২৫ কোটি ডলার পাওয়ার কথা থাকলেও তা আরও কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে।

তবে শুধু বিশ্বব্যাংকই নয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তেও সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে রাশ টানার বিষয়টি রয়েছে। আইএমএফের শর্ত হলো সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যত টাকা ঋণ নেয়, সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে তার এক-চতুর্থাংশের বেশি নেওয়া যাবে না এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি পরিস্থিতি অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকারের বিনা আয়াসেই বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের শর্ত পূরণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র বেশি ভাঙছেন, কিনছেন কম। তাই নিট বিক্রি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কমে গেছে।

এ বিষয়ে সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের হাতে টাকা কম। টাকা না থাকলে কীভাবে সঞ্চয় করবে? বাজারে আগুন, খরচ বেড়েছে। তাই সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে (টাকা) উত্তোলন বেশি।

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণে তাদের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা করবে, আমরা তা বাস্তবায়ন করব। তবে যেহেতু এখন নিট বিক্রি কম, তাই আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।’

সঞ্চয়পত্র বিক্রি পরিস্থিতি কী

চলতি অর্থবছরের সব মিলিয়ে নিট ৩৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তা থেকে আগের বিক্রি করা সঞ্চয়পত্রের মূল বাদ দিয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বা প্রকৃত বিক্রি ধরা হয়।

কিন্তু সরকার নানা ধরনের কৃচ্ছ্র সাধনের উদ্যোগ নেওয়ায় এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ নেওয়া কমেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সব মিলিয়ে ৩৪ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের মূল এবং মুনাফা হিসাবে ৩৬ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হয়েছে। সরকার অবশ্য বাজেটের অন্য বরাদ্দ থেকে সুদ ও আসলের ব্যয় পরিশোধ করে।

খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের কর রিটার্নের সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, গ্রাহকের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারের সংযুক্তি এবং ই-কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) জমা দেওয়ার বিধান চালু করায় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে গেছে।

এ ছাড়া কৃচ্ছ্র সাধনের অংশ হিসেবে সরকারের অর্থের চাহিদা কমেছে, ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ নেওয়ার প্রবণতাও কমেছে। তবে সরকারের খরচের চাহিদা বাড়লে সাধারণভাবে দেখা গেছে যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে তার একটি অংশ মেটানো হয়।

কিন্তু তেমন একটি পরিস্থিতি যদি আবার তৈরি হয়, তাহলে সরকারকে তখন আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণ করতে হয় ঋণের চাহিদা কমাতে হবে, নতুবা মুনাফার হার কমিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা থেকে গ্রাহককে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

বাংলাদেশের মধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে যাঁরা চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত, সাধারণত সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন সংসার চালাতে। বহু মানুষ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে সংসারের খরচ নির্বাহ করেন। আবার জিনিসপত্রের দাম বাড়লে বাড়তি খরচ মেটাতেও অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে সংসার চালান।