Thank you for trying Sticky AMP!!

আরেকটি বিশ্বমন্দা কি আসন্ন?

বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত দুটি শব্দ হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ ও বিশ্বমন্দা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর রেশ ধরে সবার মনে এখন প্রশ্ন, তাহলে কি ১০ বছর পর আবার বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ফিরে আসছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২৩ জুলাই বিশ্ব অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনেও বিশ্বমন্দার আশঙ্কার কথা আছে। বলা হয়েছে, প্রাক্কলনের তুলনায় বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমবে। এ জন্য মূলত দায়ী করা হচ্ছে বড় দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধকে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও মন্দার আশঙ্কা ছড়াচ্ছে। ডেটা ট্র্যাক রিসার্চ নামের একটি মার্কিন সংস্থা বলছে, গুগলে যুক্তরাষ্ট্রবাসী এখন সবচেয়ে বেশি যা খুঁজছে তার মধ্যে বেকারত্ব বিষয়টি সবার ওপরে।

আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ আর আগামী ২০২০ সালে হবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ গত এপ্রিলেই আইএমএফ বলেছিল, চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি হবে আরও বেশি, যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। সংস্থাটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী বছর প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি কমবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে প্রবৃদ্ধির হার কমে হবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

আইএমএফ বলছে, বিশ্বের আর্থিক বাজারও এখন যুদ্ধ করছে মূলত দুই শক্তির সঙ্গে। কেননা বাণিজ্যযুদ্ধ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্রমেই বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মনে করছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভাব আরও বিরূপ হবে। এ ছাড়া, সম্ভাব্য মন্দা মোকাবিলায় দেশগুলো আর্থিক নীতিতে যেসব পরিবর্তন আনছে, তাতেও সংকট আরও জটিল হবে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে বলে তারা জানিয়েছে।

 আইএমএফের এই হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস। ৯ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে, ‘বিশ্বমন্দার ঝুঁকি বাড়ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোটেই এ জন্য প্রস্তুত নয়’। নিউইয়র্ক টাইমস মূলত প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং ব্যাংক অব জাপানের মতো উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, অনেকের ধারণা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা ঢুকবে আগামী বছরেই। উৎপাদন খাতের দুর্বলতা ও বাণিজ্যযুদ্ধ এর প্রধান কারণ। আবার জার্মানিতে বাড়ছে বেকারত্বের হার, শিল্প উৎপাদনও শ্লথ হয়ে পড়েছে। জাপানেও উৎপাদন খাতের গতি শ্লথ।

>

বিশ্ব অর্থনীতির গতি শ্লথ
আশঙ্কা আরেকটি মন্দার
মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন

মন্দা থেকে উত্তরণে সারা বিশ্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হয়। ২০০৮ সালেও দেখা গেছে, মন্দার ওই সময়ে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে সুদহার কমানো, বন্ড কেনা বাড়িয়ে দেওয়া, বিভিন্ন ধরনের আর্থিক পণ্য তৈরি, সরকার থেকে ব্যাংক খাতে অর্থ সরবরাহের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এ অবস্থায় আবার মন্দা দেখা দিলে উন্নত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার কী করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে এ নিয়ে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শূন্য সুদহারের দিকে চলে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সুদহার সবচেয়ে কম। ফলে নতুন করে কমানোর সুযোগ সীমিত। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে প্রচুর বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিজ কিনে রেখেছে। এ ক্ষেত্রেও নতুন করে কেনার সুযোগ কম। এ অবস্থা হলে মন্দার সময় কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সেই প্রস্তুতি কতটা আছে—এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি

বিশ্বে মন্দা দেখা দিলে দুই দিক থেকে সুবিধাজনক পর্যায়ে থাকবে বাংলাদেশ। কারণ, এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা তেমন নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে বটে, তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশে মুদ্রানীতি তৈরি করা হয়। অথচ অন্যান্য দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সুদহার নীতির প্রভাব পড়ে সারা বিশ্বে। অনেক ক্ষেত্রে বাজেটের চেয়েও শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের করণীয় তেমন কিছু নেই। দ্বিতীয়ত, ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি। বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা কম বলেই এমনটি হয়। এ কারণে একধরনের আত্মতৃপ্তি দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আছে। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, নতুন করে বিশ্বমন্দা দেখা দিলে পরিস্থিতি আগের মতো না–ও হতে পারে। কারণ, অনেক কিছু বদলে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্পৃক্ততাও আগের চেয়ে বেড়েছে। সুতরাং সতর্ক থাকাটাই ভালো।

দেশের অর্থনীতিও এখন চাপের মধ্যে আছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধিও অর্থনীতির দুর্বলতা ঢাকতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ২১ জুলাই দেশের সব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। সে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরি পলিসি বিভাগ ও চিফ ইকোনমিস্ট ইউনিট থেকে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটা প্রতিবেদন উপস্থাপনা করা হয়েছে। সেখানে অর্থনীতির স্বল্পমেয়াদি আভাস ও ঝুঁকি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের পাশাপাশি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে প্রবৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য সংঘাতজনিত অনিশ্চয়তা, বৈশ্বিক সংকুচিত অর্থব্যবস্থা, বিলম্বিত ব্রেক্সিট পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় অর্থবাজারে ক্রমবর্ধমান শ্রেণীকৃত ঋণের হার এবং কিছুটা সংকুচিত উদ্বৃত্ত তারল্য পরিস্থিতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতির ধারাকে ব্যাহত করতে পারে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতিতে নানা ঝুঁকি তৈরি হয়ে আছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কী করতে পারবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।