Thank you for trying Sticky AMP!!

তেলের দামে এখনো প্রভাব পড়েনি

২০২০ সালের এপ্রিল মাস। সারা পৃথিবীতে চলছে লকডাউন। রাস্তাঘাট সুনসান—বিরাজ করছিল এক ভুতুড়ে পরিবেশ। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানির তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে যায়; অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দিতে হবে। সেখান থেকে তেলের বাজার অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

অক্টোবরের শেষ নাগাদ জ্বালানির দাম ৮৩ ডলারে উঠে যায়। গতকাল এই প্রতিবেদন লেখার সময় দাম ছিল প্রায় ৭৯ ডলার—পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিষয়টি হলো, করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরনের প্রভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে শঙ্কা ছিল, জ্বালানির দাম আবার কমতে শুরু করবে; কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

এদিকে অমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু দেশে লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বড়দিনের ব্যবসা আশানুরূপ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রগামী অনেক বিমানের উড়ান বাতিল করা হয়েছে। ফলে জ্বালানির দাম হ্রাসের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

অমিক্রনের কারণে যে বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে, তাতে জ্বালানির সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, তেলক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তিনটি তেল উত্তোলনকারী কোম্পানি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক খদ্দেরদের কাছে দায়মুক্তি চেয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রাথমিক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুত টানা পাঁচ সপ্তাহ কমেছে। তবে গ্যাসোলিনের মজুত অপরিবর্তিত আছে। ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুত গত সপ্তাহে প্রায় ৩১ লাখ ব্যারেল কমে গেছে, যদিও ধারণা ছিল, তেলের মজুত কমবে ৩২ লাখ ব্যারেল।

ইংল্যান্ড এখনই স্বাস্থ্যজনিত বিধিনিষেধ আরোপ করছে না। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেছেন, ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের সঙ্গে স্বাস্থ্য
ব্যবস্থা খাপ খাইয়ে নিতে পারবে কি না, তা খতিয়ে দেখছে সরকার।

এই বাস্তবতায় জ্বালানির দাম নির্ভর করছে মূলত ওপেক ও তেল উত্তোলনকারী অন্যান্য দেশের ওপর। আগামী ৪ জানুয়ারি তেল উত্তোলনের বিষয়ে বৈঠক করবে তারা। সেদিন ঠিক হবে, ফেব্রুয়ারি মাসে তারা দৈনিক চার লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করবে, নাকি আরও কমাবে। এর আগের বৈঠকে তারা ঠিক করেছিল, জানুয়ারি মাসে জ্বালানি উত্তোলন বাড়ানো হবে।

তবে আশার কথা হলো, স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের এই অমিক্রন ধরন বেশি ছড়ালেও, অতটা মারাত্মক নয়। এই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এখনো অনেক কম। ফলে বিশ্বের সব দেশ একযোগে আবার লকডাউনে যাবে, তেমন সম্ভাবনা কম। সেই সঙ্গে কোভিডের টিকা আরও এক বছর আগে চলে এসেছে। কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য ওষুধও বাজার বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গত দুই বছরে কোভিড মোকাবিলার অভিজ্ঞতাও কম হয়নি। এই বাস্তবতায় এখন শূন্য কোভিড নীতি অনুসরণের বিশেষ প্রয়োজন আছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন না। বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও অপ্রয়োজনীয় জনসমাগম হ্রাস করে অর্থনীতি যতটা সচল রাখা যায়, এখন সেই চেষ্টা করতে হবে, তাঁরা এমন কথাই বলছেন।

২০০৮ সালের জুলাই মাসে ব্রন্ট ক্রুড তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৪৭ ডলারে উঠেছিল। এবার যখন জ্বালানির দাম ৮০ ডলারে উঠল, তখন ধারণা ছিল, দাম আবার ১০০ ডলার পেরোবে। তবে শেষমেশ তা হয়নি। টেড্রিং ইকোনমিকসের পূর্বাভাস, আগামী এক বছরে তেলের দাম ৬৮ ডলারের নিচে নামবে না।