Thank you for trying Sticky AMP!!

তেল-বাণিজ্যে ভূরাজনীতি

প্রায় সাড়ে চার বছর ধরেই ভূরাজনৈতিক কারণে বিশ্ববাজারে চলছে তেলের দামের ওঠা-নামা। ছবি: রয়টার্স

পেট্রল পাম্পে গিয়ে গাড়ির তেল ভরার সময় ক্রেতা সৌদি আরব–ইরান সম্পর্ক নিয়ে না ভাবলেও দামটা নিয়ে ঠিকই ভাবেন। সৌদি আরবে কে হামলা চালাচ্ছে আর ইরানকেই–বা কে হুমকি দিচ্ছে, তা মনের জগতে প্রত্যক্ষ প্রভাব না ফেললেও দাম পরিশোধের সময় পরোক্ষ প্রভাব ঠিকই ফেলে। কারণ, বিশ্বের অন্যতম তেল উৎপাদনকারী এই দুই দেশের ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক প্রভাব ফেলেছে তেলের বাজারে। 

গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রাষ্ট্রমালিকানাধীন তেল সংস্থা আরামকোর সবচেয়ে বড় তেল পরিশোধনাগার আবকায়িক ও খুরাইসে ড্রোন হামলা হয়। হামলার কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। ফলে সৌদি আরবের তেল উৎপাদনের পরিমাণ সাময়িক সময়ের জন্য দিনে ৫৭ লাখ ব্যারেল কমে যায়, যা দেশটির মোট উৎপাদনের অর্ধেক আর বৈশ্বিক বাজারে তেলের সরবরাহের প্রায় ৫ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে তেলের দাম হুহু করে বেড়ে যায়। এক দিনেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ, যা কিনা গত ৩০ বছরের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি। তবে কয়েক দিনের মধ্যে উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরে আসবে—সৌদি জ্বালানিমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে শান্ত হয় বাজার, দাম কিছুটা কমে আসে। 

তবে এই হামলার জন্য কে দায়ী, এই দোষারোপে উত্তপ্ত আছে ভূরাজনীতি। ইরানের মদদপুষ্ট ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অভিযোগ ইরানের দিকে। ইরান অস্বীকার করছে অভিযোগ। অন্যদিকে মুখে কুলুপ এঁটে কারও ঘাড়ে এখনো দোষ চাপায়নি সৌদি আরব। তাই শেষ পর্যন্ত বাজার কোন দিকে মোড় নেবে, তা বিশ্লেষণের এখনো বহু জায়গা আছে। 

আসলে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরেই ভূরাজনৈতিক কারণে বিশ্ববাজারে চলছে তেলের দামের ওঠা–নামা। ২০১৪ সালের জুন থেকে হঠাৎ করেই বিশ্ববাজারে কমতে থাকে জ্বালানি তেলের দাম। এর আগে ব্যারেলপ্রতি ১১৪ ডলার দাম ছিল। সব পক্ষকে অবাক করে এক বছরের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকের নিচে নেমে যায়। তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি মাত্র ৪০ ডলারে পৌঁছায়, যা ছিল ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দর। অর্থনীতিবিদেরা বিষয়টিকে সেই প্রচলিত সাধারণ তত্ত্বেই ফেলেন। আর তা হলো চাহিদা-জোগান তত্ত্ব। সে সময় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের সরবরাহ অনেক বেশি ছিল। সেই তুলনায় চাহিদা কমে গিয়েছিল। আর চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি থাকলে দাম কমে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এই চাহিদা–জোগানের তারতম্যটা হয় রাজনৈতিক কারণেই। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র তেলের উৎপাদন দ্বিগুণ করে ফেলে। বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ হয়েও যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তেল আমদানি করে। তবে ‘শেল ওয়েল’ বা পাথরের খাঁজে সঞ্চিত তেলের বড় মজুত পাওয়ায় তারা আমদানি কমিয়ে দেয়। ফলে সৌদি আরব, নাইজেরিয়া বা আলজেরিয়ার মতো দেশগুলো আগে যুক্তরাষ্ট্রে তেল বেশি রপ্তানি করলেও এখন তারা নজর দিতে থাকে এশিয়ার দিকে। সেখানেও আবার অনেক বড় প্রতিযোগিতা। ফলে বাজার ধরতে দাম কমাতে বাধ্য হয় তারা। এ ছাড়া বাজার ধরতে কানাডা, ইরাক, এমনকি রাশিয়াও তেল সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। সে সময় ইউরোপ–চীনের অর্থনীতি বেশ মন্দায় ছিল। তার ওপর নতুন প্রযুক্তির কারণে অনেক দেশই জ্বালানিসাশ্রয়ী গাড়ির উদ্ভাবন করে। চাহিদা কমতে থাকে। একসময় ব্যারেলপ্রতি কমে ৩০ ডলারের নিচে নেমে আসে। দুই বছরের মধ্যে তেলের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। 

টানা দুই বছর ধরে নানাভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করা হয়। তেল উত্তোলন কমানোর বিষয়ে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক এবং ওপেক-বহির্ভূত ১১টি দেশ সম্মত হওয়ায় বিশ্ববাজারে আবার বাড়তে থাকে জ্বালানি তেলের দাম। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে তেল উৎপাদন কমাতে শুরু করে ওপেকভুক্ত দেশ ইরান, ইরাক, কুয়েত, সৌদি আরব, ভেনেজুয়েলাসহ ১৪টি দেশ এবং রাশিয়া। তিন মাসের মধ্যে তেলের দাম ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। আস্তে আস্তেই বাড়তে থাকে তেলের দাম। 

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনকারী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিদিন ১ কোটি ৫৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে দেশটি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সৌদি আরব। দেশটি প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল উৎপাদন করে। অন্যদিকে ইরান প্রতিদিন প্রায় ৪৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে।