Thank you for trying Sticky AMP!!

নিল আর্মস্ট্রংয়ের চাঁদের পাথরেরও শুল্কায়ন হয়েছিল

চাঁদ নিয়ে কতশত কল্পনা করেন পৃথিবীর মানুষ। এ দেশে চাঁদের বুড়ির গল্প তো রীতিমতো রূপকথা। চাঁদের মাটি কেমন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। মানুষের আগ্রহ মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাশনাল হিস্ট্রিতে চাঁদ থেকে আনা পাথর রাখা আছে। এসব পাথর প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে চাঁদ থেকে আনা হয়েছিল। এগুলো সত্যিকার চাঁদের পাথর; রেপ্লিকা নয়। মানুষ হিসেবে চাঁদে প্রথম পা রাখা নভোচারী নিল আর্মস্ট্রংয়ের আনা পাথরটিও ওই জাদুঘরে আছে। চাঁদের পাথর দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক নিউইয়র্কের ওই জাদুঘরে যান, ছবি তোলেন।

আপনি জেনে অবাক হবেন, নভোচারী নিল আর্মস্ট্রংয়ের ওই চাঁদের পাথরটি কাগজে-কলমে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছিল। চাঁদের পাথরটিকে রীতিমতো শুল্কায়ন প্রক্রিয়া মেনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হয়েছে। বলা যেতে পারে, চাঁদের পাথরই হলো পৃথিবীর বাইরে থেকে আনা মানুষের প্রথম আমদানি পণ্য।

চাঁদের পাথরের আমদানিকারক ছিল ন্যাশনাল অ্যারোনেটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। আমদানি পণ্যের যানবাহন হিসেবে অ্যাপোলো-১১ দেখানো হয়েছে। এমনকি এসব পাথর ও ধূলিকণা যে চাঁদ থেকে আনা হয়েছে, তা-ও ঘোষণা দিতে হয়েছে। সেই শুল্কায়ন ফরমে অ্যাপোলো-১১-এর ক্রু হিসেবে নিল আর্মস্ট্রং, অ্যাডুইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স সই করেন।

১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১-তে চেপে নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং, অ্যাডুইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স চাঁদের দেশে যান। তাঁদের মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে প্রথম কোনো মানবসন্তান পা রেখেছিল। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার নতুন এক দিগন্তের সূচনা হয়। ফিরে আসার সময় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে গবেষণার জন্য কয়েকটি পাথর ও কিছু ধূলিকণা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তাঁরা। এসব পাথর ও ধূলিকণা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নামাতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়েছে। রীতিমতো যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বিভাগের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে এসব পাথর ও ধূলিকণা খালাস হয়েছিল, যা বিশ্বের শুল্ক ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। তবে এসব পণ্য আমদানির জন্য কোনো শুল্ক পরিশোধ করতে হয়নি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সাধারণত এক দেশের পণ্য আরেক দেশে গেলে শুল্কায়ন করতে হয়। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা পণ্যের শুল্কায়নের সেটিই প্রথম ঘটনা।

চাঁদের পাথরের শুল্কায়নের নথি

এই চমকজাগানো ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৮ সালের ২৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলু এয়ারপোর্টে। এই এয়ারপোর্ট দিয়েই চাঁদের পাথর ও ধূলিকণা খালাস করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের (সিবিপি) নির্ধারিত ফরমে এসব পণ্যের ঘোষণা দিয়ে শুল্কায়ন করতে হয়েছিল। চাঁদের পাথরের আমদানিকারক ছিল ন্যাশনাল অ্যারোনেটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। আমদানি পণ্যের যানবাহন হিসেবে অ্যাপোলো-১১ দেখানো হয়েছে। এমনকি এসব পাথর ও ধূলিকণা যে চাঁদ থেকে আনা হয়েছে, তা-ও ঘোষণা দিতে হয়েছে। সেই শুল্কায়ন ফরমে অ্যাপোলো-১১-এর ক্রু হিসেবে নিল আর্মস্ট্রং, অ্যাডুইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স সই করেন। শুল্ক ফরমে তাঁদের কোনো অসুখ-বিসুখ আছে কি না, তা-ও জানাতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করার নিয়ম হিসেবে যেসব যানে পণ্য এসেছে, সেসব যানের ক্রু বা নভোচারীদের অসুখ-বিসুখ থাকলে নভোযানসহ ডিসঅ্যাম্বারকড, অর্থাৎ চাঁদে ফেরত পাঠানো হবে, এমন শর্তও ছিল।

এই ঘটনা বিশ্ব শুল্ক ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন (ডব্লিউসিও) দেশে শুল্ক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসব প্রশিক্ষণে শুল্ক ব্যবস্থার ইতিহাস পড়াতে গিয়ে শুল্কায়নের গুরুত্ব বোঝাতে প্রশিক্ষকেরা চাঁদের পাথর আমদানির বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে দেন।