Thank you for trying Sticky AMP!!

রাশিয়াকে দমাতে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ২৫ ডলারে নিল সৌদি

সৌদি আরব সব সময়ই রাশিয়ার চীনা ও ভারতীয় ক্রেতাদের নিজের দিকে টানতে চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপকে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল ২৫ ডলারে দিচ্ছে সৌদি আরব। রাশিয়ার তেলের ইউরোপীয় ক্রেতাদের টার্গেট করেই সৌদি আরব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থা আরামকো জানিয়েছে, তারা এপ্রিল মাসে আগের যে অতিরিক্ত অনুরোধ ছিল, সেই পরিমাণ তেল সরবরাহ করবে। পাঁচটি ব্যবসায়িক সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল শনিবার এই তথ্য জানায় রয়টার্স।

এশিয়া ও ইউরোপের তেলের বাজারের মূল সরবরাহকারী রাশিয়া। এখন রাশিয়ার এই বাজার ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে সৌদি আরব।

রয়টার্সকে ইউরোপের বিভিন্ন তেল পরিশোধক কোম্পানি বলেছে, আরামকো জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে তাদের চাওয়া অনুযায়ী তেল সরবরাহ করবে তারা।

সৌদি আরব সব সময়ই রাশিয়ার চীনা ও ভারতীয় ক্রেতাদের নিজের দিকে টানতে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। যদিও ক্রেতাদের যে পরিমাণ জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল, তা সরবরাহ করতে পারেনি সৌদি আরব। এবার তারা সরবরাহ বাড়াবে।

তেলের উৎপাদন নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে রাশিয়ার একধরনের মতভেদ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মস্কো জানিয়েছে, তাদের কোনো আলোচনায় বসার পরিকল্পনাই নেই।

রাশিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক গত শুক্রবার বলেন, তার দেশ ওপেক প্লাস অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনায় ফিরে আসার কোনো কারণ দেখছে না। এপ্রিল মাসে প্রতিদিন ২ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর ইচ্ছা আছে তাদের।

এদিকে এর বিপরীতে এপ্রিল থেকে ২৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলছে সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাতও উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় বিশ্ববাজারে এক মাস ধরে তেলের চাহিদা কমে গেছে। দিন দিন দাম পড়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে তেলের দাম। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দাম কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

জ্বালানি তেলের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে ৫ মার্চ থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বৈঠকে বসে ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলো। এতে সিদ্ধান্ত হয়, তেলের দাম বাড়াতে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন দিনে ১৫ লাখ ব্যারেল কমাবে তারা, যা বিশ্বের মোট সরবরাহের প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

ওপেক আশা করছিল, রাশিয়া প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাতে সম্মত হবে। তবে এতে সম্মতি জানায়নি ওপেকের মিত্র জোট ওপেক প্লাসের নেতৃত্বে থাকা রাশিয়া। এ কারণে নতুন চুক্তি হওয়ার বিষয়টি ভেস্তে যায়।

এর প্রভাবে শুক্রবার থেকে ব্যাপক দরপতন হয় তেলের দামের। এর মধ্যে গতকাল শনিবার তেলের দাম কমায় সৌদি আরামকো। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত এই কোম্পানি তেলের দাম তাদের মূল গ্রেড থেকে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমায়। তেলের ‘মূল্য–যুদ্ধ’ শুরু করে সৌদি আরব। সংস্থাটি এশিয়ায় এপ্রিলের চালানের জন্য ক্রুড তেলের দাম কমিয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৪ থেকে ৬ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কমিয়েছে ৭ ডলার। যার প্রভাবে পরের কার্যদিবসেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে ৩৩ শতাংশ, যা ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক বাজারে এক দিনের কেনাবেচায় জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দরপতন।

২০১৬ সালে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৩০ ডলারে নেমে আসার পর ওপেকের নেতৃত্বে রাশিয়া ও সৌদি আরব তথাকথিত একটি জোট গঠন করেছিল। সে সময় থেকে রাশিয়া ও সৌদি আরব সমন্বিতভাবে প্রতিদিন ২১ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমায়। চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০২০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৩৬ লাখ ব্যারেলে নিতে চেয়েছিল সৌদি আরব। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একমত হননি। ৬ মার্চ ওপেকের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক জানান, আগমী ১ এপ্রিল থেকে রাশিয়া তার ইচ্ছেমতো তেল উৎপাদন করবে। রাশিয়া জানিয়ে দেয়, জোট ছাড়ছে তারা। মস্কোর দাবি, দাম স্থিতিশীল রাখতে উৎপাদন কমাতে কমাতে তারা ক্লান্ত।