Thank you for trying Sticky AMP!!

শত বছরের মধ্যে বৃহত্তম বিপর্যয়

করোনার কারণে বিমানবন্দরগুলোর হ্যাঙ্গারে পড়ে থাকে বিমান সংস্থাগুলোর শত শত উড়োজাহাজ।

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের মাহরাবিন। সেখানে যেতে ৪ জানুয়ারির বিমান টিকিট কাটেন। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে তাঁর বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে কি না করোনার আঘাত। কারণ, অনেক এয়ারলাইনস বা বিমান সংস্থাই যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট বা উড়ান বাতিল করেছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতেই তাদের এমন সিদ্ধান্ত। ফলে বাতিল হয়ে গেল মাহরাবিনের ফ্লাইটও। তবে চালু হলে যেতে পারবেন। কিন্তু সেই সুদিন কবে আসবে, তা অনিশ্চিত।

বিদায়ী বছরের মার্চে করোনাভাইরাস দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিমানবন্দরগুলোর হ্যাঙ্গারে পড়ে থাকে বিমান সংস্থাগুলোর শত শত উড়োজাহাজ। তখন অনেক বিমানবন্দরও বন্ধ হয়ে যায়। বলা হয়, বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিবহন চালু হওয়ার ১০০ বছরের ইতিহাসে এই খাত আর কখনো এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি।

যত ক্ষতি বিমান পরিবহন খাতের

করোনার কারণে প্রথমেই যেসব খাতে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে, তার মধ্যে বিমান পরিবহন সেবা অন্যতম। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) নভেম্বরে বলেছে, বিমান খাতে করোনাজনিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১১ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার ও ২০২১ সালে ৩ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার ক্ষতি প্রাক্কলন করা হয়েছে। আর জুনে সংস্থাটি করোনার কারণে বৈশ্বিক বিমান শিল্প খাতে ১০ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।

আইএটিএর পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বে মোট বিমানযাত্রীর সংখ্যা কমে ১৮০ কোটিতে নেমে আসবে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৫০ কোটি। এ ছাড়া বিদায়ী বছরে যাত্রীসেবা থেকে বিমান সংস্থাগুলোর আয় ৬৯ শতাংশ কমে হবে ১৯ হাজার ১০০ কোটি ডলার। তবে আগামী বছরে বিমান শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়ালে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে অন্তত ২৮০ কোটি হতে পারে বলে আশা আইএটিএর।

Also Read: 'লাইফ সাপোর্টে' শতবর্ষী বিমানশিল্প

অন্যদিকে জার্মানিভিত্তিক বাজার ও ভোক্তা জরিপসংক্রান্ত ডেটা নিয়ে কাজ করা স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী বিমান সংস্থাগুলো ৪৩ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এই ব্যয় আগামী বছর ৪৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বজুড়ে দেওয়া লকডাউন ও পরিবহন নিষেধাজ্ঞায় কার্গো বিমানের চেয়ে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০২০ সালের মার্চের শুরুতে আগের বছরের তুলনায় ফ্লাইট বাতিলের হার ১০ শতাংশ বেশি ছিল। মহামারি বৃদ্ধির কারণে এই হার ওই মাসের শেষ দিকে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশে ওঠে। এপ্রিলে যখন করোনা ভয়াবহ রূপ নেয়, তখন প্রায় ৮০ শতাংশ ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ে বৈশ্বিক বিমান সংস্থাগুলো একের পর এক নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়। কর্মী ছাঁটাই করে অসংখ্য এয়ারলাইনস। এই বছরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইনসগুলোর কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ হাজারে। আমেরিকান এয়ারলাইনসের মতো বড় কোম্পানি এককভাবে ১৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা জানায়। কোভিড শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপের বিমান পরিবহন খাতে কয়েক লাখ কর্মী ছাঁটাই হন। চাকরি হারানোর শঙ্কা নিয়ে বছর শেষ করেন অসংখ্য কর্মী। এতে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।