স্বপ্নের চাকরির আশা ছেড়ে দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের তরুণেরা
করোনা মহামারির কারণে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টে পুড়তে হচ্ছে যুক্তরাজ্যের তরুণ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির প্রতি তিনজনের একজন তরুণ বলছেন করোনাভাইরাসের কারণে স্বপ্নের চাকরি পাওয়ার আশা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত লন্ডনভিত্তিক দাতব্য সংস্থা দ্য প্রিন্স ট্রাস্টের ওই জরিপে আরও উঠে এসেছে, ৪৪ শতাংশ তরুণেরই ভবিষ্যৎ নিয়ে আকাঙ্ক্ষা কমে গেছে। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
দাতব্য সংস্থাটি যুক্তরাজ্যজুড়ে ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী ২০০০ জনের ওপর এই সমীক্ষা চালায়। সংস্থাটির যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী জোনাথন টাউনসেন্ড বলেন, মহামারিটি তরুণদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। তিনি মনে করেন, এই প্রজন্মের হারিয়ে যাওয়া রোধ করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ওই জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৪১ শতাংশ তরুণ এখন বিশ্বাস করেন তাঁদের লক্ষ্য অর্জন করা মোটামুটি অসম্ভব, এই বিশ্বাসের হার আবার দরিদ্র পরিবারে বেশি। এসব পরিবারের সন্তানদের ৫০ শতাংশই মনে করেন লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তিনজনের মধ্যে একজনেরও বেশি তরুণ বা প্রায় ৩৮ শতাংশ মনে করেন, তাঁরা জীবনে কখনো সফল হতে পারবেন না, দরিদ্র পরিবার থেকে জরিপে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস ৪৮ শতাংশ।
ব্রিস্টলের বাসিন্দা পিট হোয়াইট। রেল পরিবহন খাতে নিজের অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছেন। যদিও মহামারির কবলে পড়া এই খাতটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এখন ছোটখাটো কাজ করলেও একদিন রেলের চালক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। করোনার আগে তিনি গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়েতে চালকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছিলেন। তবে করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে সেটি বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, এই বছর এটা হলো না, মনে হচ্ছে আগামী বছরও হবে না।
জরিপে আরও যা দেখা গেছে—
২৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন যে চাকরি এখন পাওয়া যাবে, সেটাই করা উচিত।
তিনজনের মধ্যে একজনের (৩৫ শতাংশ) বেশি বিশ্বাস করেন, যেকোনো কাজের জন্য স্বপ্নের কাজটি ছেড়ে দেওয়া উচিত।
প্রায় ৪৩ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন যে ধরনের চাকরি পছন্দ করেন তারা তা কখনোই পাবেন না। এটি দরিদ্র পরিবার থেকে আসা তরুণদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ।
এবং ৪৫ শতাংশ তরুণ বলেন, তাঁরা জীবনের চাহিদা মেটাতে কম বেতনের চাকরি নিতেও প্রস্তুত।
টাউনসেন্ড বলেন, মহামারিটি তরুণ সম্প্রদায়ের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চাকরির ওপর আশঙ্কার চেয়েও অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এটি তাঁদের ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা এতটাই কমিয়ে দিয়েছে যে তাঁদের অনেকেই মনে করেন জীবনে কখনো সফল হতে পারবেন না তাঁরা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষার ব্যবধান রয়েছে, তরুণেরা ভবিষ্যতের জন্য আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং দুঃখের বিষয়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা সবচেয়ে বেশি আঘাত পাচ্ছেন।’