Thank you for trying Sticky AMP!!

১০০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে

বিশ্বে বিভিন্ন অঞ্চলে দারিদ্র্যহার কমলেও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মধ্য আমেরিকার দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীর ঢল নেমেছে এ বছর। হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী মেক্সিকোতে অবস্থান করছে। ছবি: রয়টার্স
>

• আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলে গরিব মানুষ বেড়েছে
• সারা বিশ্বে বাস্তুচ্যুত সাড়ে ছয় কোটি মানুষ
• ২৭০ কোটি নারীর পছন্দের চাকরিতে বিধিনিষেধ
• নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের ঋণের পরিমাণ তিন গুণ
• ৯১ শতাংশ মানুষ নির্মল বায়ু পায় না
• অর্ধেক শিক্ষার্থীই যথাযথ শিক্ষাবঞ্চিত

বিশ্বের দারিদ্র্যহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে। গত তিন দশকে বা ৩০ বছরে ১০০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠেছে। বিশ্বে অন্য অঞ্চলে দারিদ্র্য কমলেও আফ্রিকার সাব সাহারা এলাকায় বাড়ছে। অন্যদিকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ কোটি। বিশ্বের ৯১ শতাংশ মানুষ নির্মল বায়ু পায় না।

২০১৮ সালের বিদায় উপলক্ষে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে। সেখানে এই চিত্র পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে যত বর্জ্য তৈরি হয়, তার ৩৩ শতাংশই খোলা জায়গায় ফেলা হয়। আবার ২৭০ কোটি নারী নিজের পছন্দমতো চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে আইনি বিধিনিষেধ।

অতিদারিদ্র্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে চলতি বছরে বিশ্ব দারিদ্র্য পরিস্থিতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে। ১৯৯০ সালে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ যেখানে অতিদরিদ্র ছিল, যাদের আয় দৈনিক ১ ডলার ৯০ সেন্টও ছিল না, সেখানে ২০১৫ সালের হিসাবে সারা বিশ্বের মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ অতিদরিদ্র। গত তিন দশকে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠেছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশই তাঁদের দারিদ্র্যহার ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে।
তবে বিশ্বের অন্য অঞ্চলে গরিব মানুষের সংখ্যা কমলেও ভিন্ন চিত্র আফ্রিকার সাব সাহারা এলাকায়। সেখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯০ সালে ওই অঞ্চলে ২৭ কোটি ৮০ লাখ হতদরিদ্র ছিল। ২০১৫ সালে তা বেড়ে ৪১ কোটি ৩০ লাখে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ২৮টি দেশের মধ্যে ২৭টিই সাব সাহারা এলাকায়। সাব সাহারা এলাকায় এখন যত দরিদ্র মানুষ আছে, সারা বিশ্বেও এত দরিদ্র মানুষ নেই।

বাস্তুচ্যুত সাড়ে ছয় কোটি
দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে দেশের অভ্যন্তরে কিংবা দেশের বাইরে বাস্তুচ্যুত হয় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী। ২০১৭ সালের হিসাবে দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা চার কোটি। আর দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, এমন বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৫৪ লাখ। সারা বিশ্বে যত বাস্তুচ্যুত মানুষ আছে, তাদের ৮৫ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশে অবস্থান করছে। বাকি বাস্তুচ্যুত মানুষ থাকে ৫৫টি উচ্চ আয়ের দেশে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বাস জার্মানিতে।

৯১ শতাংশ মানুষ নির্মল বায়ু পায় না
বিশ্বের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে ৯ জনই দূষিত বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। এই হিসাব করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ১০৮ দেশের ৪ হাজার ৩০০ শহর ও বসতির ওপর গবেষণায় এই ফল পাওয়া গেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এই ধরনের দূষিত বায়ু বেশি প্রবাহিত হয়।

৩৩ শতাংশ বর্জ্য খোলা জায়গায়
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বেহাল চিত্রও তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, বিশ্বের ৩৩ শতাংশ বর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলা হয়। শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতার কারণে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলা হয়। নিম্ন আয়ের দেশের ৯৩ শতাংশ বর্জ্য রাস্তার পাশে, খোলা জায়গায় কিংবা পানিতে ফেলা হয় কিংবা পোড়ানো হয়। অন্যদিকে উচ্চ আয়ের দেশের মাত্র ২ শতাংশ বর্জ্য এমন জায়গায় থাকে। ২০১৬ সালের হিসাবে সারা বিশ্বে ওই বছর ২৪ কোটি ২০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে।

২৬০ কোটি লোকের পয়োব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়
সারা বিশ্বের ২৬০ কোটি মানুষের উন্নত টয়লেট-সুবিধা বা হাত ধোয়ার পরিষ্কার পানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। দুর্বল পয়োব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর ১৬ লাখ শিশু খর্বাকৃতির হয়। এসব কারণে সারা বিশ্বে এখন ১৫ কোটির বেশি খর্বাকৃতির শিশু আছে।

অর্ধেক শিক্ষার্থীই যথাযথ শিক্ষাবঞ্চিত
যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন সারা বিশ্বে শিক্ষিত মানুষ বেশি। কিন্তু ভিন্ন চিত্রও আছে। সারা বিশ্বের শিক্ষার একই মানদণ্ড তুলনা করলে দেখা যায়, অর্ধেক শিক্ষার্থীই যথাযথ মানে শিক্ষা পায়নি। এর কারণ নিম্ন আয়ের দেশের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অভাব। ২৬ কোটি শিশু ও তরুণ কখনোই স্কুলে যায়নি।

২৭০ কোটি নারীর পছন্দের চাকরিতে বিধিনিষেধ
আইনি বিধিনিষেধ থাকায় ২৭০ কোটি নারী নিজের পছন্দ অনুযায়ী কিছু কাজ বা চাকরি করতে পারেন না। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ১০৪টি দেশে এসব কাজে নারীদের আইনি বিধিনিষেধ আছে। ৫৯টি দেশে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইনি সুরক্ষা দুর্বল। ১৮টি দেশে স্বামী আইনগতভাবে স্ত্রীর কিছু কাজে যোগদানে বাধা দিতে পারেন।

ঋণের পরিমাণ তিন গুণ
এক বছরের ব্যবধানে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের ঋণের পরিমাণ তিন গুণ হয়েছে। ২০১৬ সালে এসব দেশের ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ।

গ্রামের চেয়ে দ্বিগুণ লোক শহরে
২০৫০ সালে গ্রামের চেয়ে দ্বিগুণ লোক শহরে বাস করবে। ১৯৬০ সালে পৃথিবীর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী শহরে বাস করত। ২০১৮ সালে ৫৫ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। ২০৫০ সালে উন্নয়নশীল দেশের শহরের জনসংখ্যা ৯০ শতাংশ বাড়বে। তখন সারা বিশ্বের যত লোক শহরে থাকবে, তাদের ৩৫ শতাংশই ভারত, চীন ও নাইজেরিয়ার।

বছরে প্রায় ১২ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ পাবে
প্রতিবছর গড়ে ১১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আসবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বিদ্যুৎ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি দেশ সফল হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এই তালিকায় আছে ইথিওপিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া। ভারত প্রতিবছর গড়ে তিন কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনছে।