Thank you for trying Sticky AMP!!

৯০ শতাংশ, নাকি ১০০ শতাংশ

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মার্চে লকডাউন জারি করে ভারত

দোকান, বিপণিবিতান, বাজার—সবই এখন স্বাভাবিক নিয়ম চলছে। কিন্তু তাতেও কি বলা যায়, অর্থনীতি আগের জায়গায় ফিরে গেছে। অর্থনীতিবিদেরা এখন এমন কথাই ভাবছেন। এক হিসাবে বলা হচ্ছে, চলতি বছরের ১০ এপ্রিল যখন সারা পৃথিবী লকডাউনের মধ্যে ছিল, মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছিল না, সেদিন বৈশ্বিক জিডিপির আকার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কম ছিল। এরপর লকডাউন উঠে গেল, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হলো; তারপরও অর্থনীতিবিদদের ধারণা, তৃতীয় প্রান্তিকের বৈশ্বিক জিডিপি দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে ৭ শতাংশ সংকুচিত হবে।

জেপি মরগ্যানের হিসাব অনুসারে, জুলাই মাসের মধ্যে বৈশ্বিক খুচরা বিক্রি মহামারি-পূর্ব সময়ে ফিরে গেছে। পৃথিবীব্যাপী ২ লাখ কোটি ডলার নগদ সহায়তার বদৌলতে মানুষ ঘরে থাকার সময়ও অনলাইনে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেছে, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে ডাম্বেল।

মনে হতে পারে, দ্রুত পতনের পর অর্থনীতি দ্রুতই আবার ঘুরে দাঁড়াবে, অর্থাৎ ভি আকৃতির পুনরুদ্ধার দেখব আমরা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবী এখনো স্বাভাবিকতা থেকে যোজন যোজন দূরে। ভাইরাস এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফলে প্রায় সব দেশেই এখনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম চালু আছে। এতে রেস্তোরাঁ, পাব ও খেলার মাঠের মতো জায়গায় একসঙ্গে বেশি মানুষ একত্র হতে পারে না। তাতে ভোগব্যয় কমে। মানুষের মধ্যেও আক্রান্ত হওয়ার ভয় আছে। সে কারণে অনিশ্চয়তা এখন রেকর্ড উচ্চতায় এবং তাতে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

লকডাউনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় শুয়ে গৃহহীন মানুষ

বাস্তবতা হচ্ছে, লকডাউন তুলে নেওয়ার মাসাধিককাল পরেও অর্থনীতি স্বাভাবিকতার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রিয়াশীল থাকতে পারে, দ্য ইকোনমিস্ট এমন পূর্বাভাসই দিয়েছিল এপ্রিল মাসে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে তাকালে তা অনেকটাই সত্য প্রমাণিত হয়। ৯০ শতাংশ অনেক মনে হলেও দেশে দেশে অঞ্চলে অঞ্চলে অনেক ভিন্নতা আছে। অনেকে যেমন বিস্ময়করভাবে ভালো করছে, তেমনি অনেকে আবার খুব খারাপ করছে। পণ্য ও সেবার আমদানি-রপ্তানি দেখলেই ব্যাপারটা বোঝা যায়। স্বাভাবিকভাবেই পণ্য–বাণিজ্য দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

জেপি মরগ্যানের হিসাব অনুসারে, জুলাই মাসের মধ্যে বৈশ্বিক খুচরা বিক্রি মহামারি-পূর্ব সময়ে ফিরে গেছে। পৃথিবীব্যাপী ২ লাখ কোটি ডলার নগদ সহায়তার বদৌলতে মানুষ ঘরে থাকার সময়ও অনলাইনে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেছে, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে ডাম্বেল। অংশত এ কারণে অর্থনীতিবিদেরা যতটা খারাপ ফল আশা করেছিলেন, বাস্তবে সে রকম হয়নি।

ইতালিতে করোনায় মারা গেছে অসংখ্য মানুষ

কারখানায় পণ্য উৎপাদন প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে গেছে। কিন্তু মার খাচ্ছে সেবা খাত। মহামারি-পূর্ব সময়ের তুলনায় তা অনেক পেছনেই আছে। মানুষের মধ্যে ভিড় এড়িয়ে চলার প্রবণতা সেবা খাতের দুরবস্থার মূল কারণ। ওপেনটেবিল নামের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, রেস্তোরাঁয় মানুষের উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০–৪০ শতাংশ কম। আর উড়ানের সংখ্যা মহামারি-পূর্ব সময়ের তুলনায় স্রেফ অর্ধেক। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার পার্থক্য আরও উল্লেখযোগ্য। পতনের সময় গ্রাফের রেখা ভিন্নমুখী হবে সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এ বছর যে হারে পতন হয়েছে, তাতে দেশে দেশে পার্থক্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

জি–৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পার্থক্য ৬ থেকে ৭ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে ধনী দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি, ২০০৮-০৯ সালের সংকটের তুলনায় অনেক বেশি। বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ২০২০ সালে কেবল চীনের প্রবৃদ্ধি হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার সংকোচন হলেও বিপর্যয়ের পর্যায়ে যাবে না। তবে ব্রিটেনের অবস্থা এমন জায়গায় গেছে যে তাদের মন্দা ১৭০৯ সালের গ্রেট ফরেস্টের পর সবচেয়ে তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে জিডিপি পরিমাপের ভিন্নতার কারণেও পরিসংখ্যানে এমন বড় ফারাক দেখা যায় বলে অনেকে মনে করেন। ব্রিটেনে এমনভাবে তা করা হয় যে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা এবং হাসপাতালে ডাক্তার-রোগী সাক্ষাৎ বন্ধ হওয়ার প্রভাব জিডিপিতে অনেক বড় আকারে প্রতিভাত হয়, যদিও বাস্তবে তা অতটা বড় নয়।

ওইসিডিও মনে করছে, বৈশ্বিক জিডিপি এ বছর আরও কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। ঘুরে দাঁড়ানোটা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর—অর্থনীতির গড়ন (উৎপাদনভিত্তিক নাকি সেবাভিত্তিক উৎপাদনভিত্তিক হলে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে), আত্মবিশ্বাস (লকডাউন ব্যবস্থাপনা) ও প্রণোদনা প্যাকেজ।

এই পরিস্থিতিতে ৯০ শতাংশ অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কী? অনেক দেশই আবার নতুন করে লকডাউন দিতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেই হয়তো অর্থনৈতিক ক্ষতি না করেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবে। তাতে বৈশ্বিক অর্থনীতি মহামারি-পূর্ব সময়ের ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে।

ওইসিডিও মনে করছে, বৈশ্বিক জিডিপি এ বছর আরও কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। ঘুরে দাঁড়ানোটা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর—অর্থনীতির গড়ন (উৎপাদনভিত্তিক নাকি সেবাভিত্তিক উৎপাদনভিত্তিক হলে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে), আত্মবিশ্বাস (লকডাউন ব্যবস্থাপনা) ও প্রণোদনা প্যাকেজ। টিকা এসে সব সমাধন দেবে, এমনটা ভাবা বেশ প্রলুব্ধকর। দ্রুতই যদি সবখানে টিকা পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে দ্রুতই স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে পারে। তবে ক্ষতস্থানে জ্বালা থাকবে। বিনিয়োগ যে কমে যাচ্ছে, তার ফল আগামী দিনে পাওয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই ভাবছেন, আগের কাজে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না, সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে অনিশ্চয়তা থাকবে। অর্থনীতিও গড় মানের চেয়ে আরও অনেক দিন নিচেই থাকবে।

দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে