Thank you for trying Sticky AMP!!

বেড়ে গেছে তেল-গ্যাস-সোনার দাম, পরিস্থিতি ‘অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ’

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান সংঘাতের জেরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য প্রায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারের ওপরে চলে গেছে। একই সঙ্গে গ্যাস ও সোনার দামেও সংঘাতের প্রভাব পড়েছে।

হামাসের সদস্যরা ৮ অক্টোবর আকস্মিকভাবে ইসরায়েলে হামলা চালান। এর জেরে গাজাজুড়ে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। আর এ কাজে সরাসরি সমর্থন ও অস্ত্রসহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের এ সংঘাতের ফলে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাস সরবরাহের ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

ইসরায়েল জ্বালানি তেলের বড় উৎপাদক নয়। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে সৃষ্ট সংঘাতে নিকটবর্তী দেশগুলোর সরবরাহে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা মূল্যায়ন করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার পর্যবেক্ষকেরা। সমুদ্রপথে বিশ্বের তেল বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে।

রয়টার্স জানিয়েছে, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এক সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম সাড়ে ৭ শতাংশ বেড়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার পর্যন্ত ফিউচার মার্কটে ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্ট তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৯০ দশমিক ৮৯ ডলার, যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক বৃদ্ধি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তাতে ব্যারেলপ্রতি দাম ৮৭ দশমিক ৭ ডলারে পৌঁছেছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সৌদি আরব ও রাশিয়া উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৭ ডলার হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সংকটের কারণে সেই দর ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) বর্তমান অবস্থাকে ‘অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এখনো সরবরাহব্যবস্থায় সরাসরি প্রভাব ফেলেনি বলে জানায় সংস্থাটি। আইইএ তার সদস্য দেশগুলোকে জরুরি মজুতের তথ্য প্রকাশ করা এবং চাহিদা সংযম–ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বেসামরিক বাসিন্দাদের উত্তর গাজা (গাজা সিটি) খালি করে দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল ইসরায়েল। আর শনিবার সকাল থেকে গাজার বিভিন্ন জায়গায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।

ডেনমার্কের স্যাক্সো ব্যাংকের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজির প্রধান ওলে হ্যানসেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, এটা অনুমান করা যাচ্ছে যে ইসরায়েল গাজার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় তেল উৎপাদকদের কেউই হয়তো আর সঠিক দামে স্থির থাকবে না। ফলে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার আগেই তেলের দাম অনেক উচ্চতায় চলে যেতে পারে।

তেলের মূল্যবৃদ্ধির আরও কারণ রয়েছে। গাজায় সংঘাতের জেরে ইরানের ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি যদি ইরানের তেল রপ্তানির ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে ইরানের তেল উৎপাদন কমবে এবং দাম আরও বাড়বে। ইতিমধ্যে ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।

অন্যদিকে রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়ে বেঁধে দেওয়া দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার লঙ্ঘন করার কারণে গত বৃহস্পতিবার সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন অর্থ বিভাগ। রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদক ও প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। ফলে ইসরায়েলের সংঘাতের পাশাপাশি নতুন এ নিষেধাজ্ঞাও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়াতে প্রভাবক হতে পারে।

গ্যাসের বাজারেও প্রভাব পড়তে পারে

সিএনএন জানিয়েছে, হামাস-ইসরায়েল সংকট ইউরোপীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইউরোপে গ্যাসের দাম ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।

হামাসের হামলার পরে গত সোমবার ইসরায়েলের উপকূলে একটি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। এ গ্যাসক্ষেত্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইসরায়েলের ৭০ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা পূরণ করে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ মিসর ও জর্ডানেও রপ্তানি করে। ফলে গ্যাসক্ষেত্রটি বন্ধ হওয়ায় ওই অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাব আবার পড়তে পারে ইউরোপসহ অন্যান্য অঞ্চলে।

যেমন মিসর আমদানির পাশাপাশি নিজেদের উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আকারে ইউরোপে রপ্তানি করে। ফলে ইসরায়েল থেকে স্বাভাবিক পরিমাণে গ্যাস না পেলে ইউরোপে এলএনজি রপ্তানি কমাতে পারে মিসর।

তেল-গ্যাসের পাশাপাশি বাজারে সোনার দামও ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। বার্তা সংস্থাটি বলেছে, শতাংশের হিসাবে গত মার্চের পর থেকে সোনার দামে সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক বৃদ্ধি ঘটেছে।