Thank you for trying Sticky AMP!!

সোনা

১০ দিনে ভারতে সোনার দাম বেড়েছে চার হাজার রুপি, আমদানি কমার আভাস

২০২০ সালে কোভিড মহামারি শুরুর পর থেকে দেশটিতে সোনার দাম ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। ১০ গ্রামের দাম প্রায় ৭২ হাজার রুপি।

ভারতের বাজারে সোনার দাম বাড়ছে। গত ১০ দিনে দেশটিতে ১০ গ্রাম সোনার দাম প্রায় চার হাজার রুপি বেড়েছে। এ বছর এ পর্যন্ত দেশটিতে সোনার দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছর ভারতের সোনা আমদানি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

সারা ভারতে অবশ্য সোনার দাম এক নয়, একেক শহরে দাম একেক রকম। তবে গড় করলে দেখা যাচ্ছে,  আজ ভারতের বাজারে ১০ গ্রাম খাঁটি সোনার দাম পড়ছে শুল্কসহ ৭৩ হাজার রুপির বেশি। গত এক এপ্রিল ভারতের বাজারে সোনার দাম ছিল গড়ে ৬৯ হাজার ৪৭১ রুপি।

 ফোর্বস ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড মহামারি শুরুর পর থেকে ভারতের বাজারে সোনার দাম ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ভারতের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্স বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ ভারতের শেয়ারবাজার গত চার বছরে যথেষ্ট চাঙা হওয়ার পরও মানুষ যে এখনো সোনাকেই বিপদ-আপদের সঙ্গী হিসেবে ভাবছে, তা পরিষ্কার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিশ্ববাজারসহ ভারতের বাজারে সোনার মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ মূল্যস্ফীতি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাজনিত অনিশ্চয়তার বিপরীতে নিশ্চিত বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সোনার প্রতি ধাবিত হচ্ছে মানুষ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার হ্রাস ও অতিমাত্রায় ডলার ছাপানোর কারণে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলার হয়তো খুব একটা আকর্ষণীয় থাকবে না, এমন আশঙ্কাও বাজারে ভর করেছে। অতিমাত্রায় ডলার ছাপানোর কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ডলারের চাহিদায় প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া নীতি সুদহার হ্রাসের কারণে স্বল্প মেয়াদে ডলারের বিনিময় হারে প্রভাব পড়তে পারে।

কমবে ভারতের আমদানি

গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে সোনার দাম একরকম স্থিতিশীল ছিল। প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল গড়ে ৬৩ হাজার রুপি। এতে ভারতের বাজারে সোনার চাহিদা বেড়েছে। এই সময় অর্থের হিসাবে, ভারতে সোনা আমদানি ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বছরে ৩৬ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উঠেছে। চলতি বছরের আমদানির পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার সোনার দাম ১০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় মার্চে সোনার চাহিদা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। যদিও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনার বাজার হিসেবে ভারত তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তার চেয়ে এ বছর ভারতের সোনা আমদানি ৯০০ টন কম হতে পারে।

আজ ভারতের বড় শহরগুলোর মধ্যে বেঙ্গালুরুতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল প্রতি ১০ গ্রাম ৭৩ হাজার ২৬৯ রুপি; চেন্নাইয়ে ৭৩ হাজার ৭৭১ রুপি; দিল্লিতে ৭৩ হাজার ৫৩ রুপি; কলকাতায় ৭৩ হাজার ৪১২ রুপি; মুম্বাইয়ে ৭৩ হাজার ৩৪০ রুপি ও পুনেতে ৭৩ হাজার ৪৮৪ রুপি।

ভারতের স্বর্ণ শিল্পমহলের মতে, বিশ্ববাজারে সোনার দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ভারতেও সোনার দাম বাড়ছে। ন্যাশনাল জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের পরিচালক সমর দে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত ১ এপ্রিল বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ২৫৫ ডলার; আজ ১০ এপ্রিল তা ২ হাজার ৩৫৩ ডলারে উঠেছে। অর্থাৎ ১০ দিনে প্রায় ১০০ ডলার বেড়েছে।

গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত এক মাসে বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ; গত ছয় মাসে বেড়েছে ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

সোনার দাম কেন বাড়ে

সোনার মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতির বিশেষ সম্পর্ক নেই বলেই গবেষকেরা মনে করেন। গবেষকদের মতে, সোনার মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ ভয় ও আতঙ্ক। সেই ১৯৩০ সালের মহামন্দার সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে, সংকট এলেই সোনার দাম বেড়ে যায়।

গোল্ড প্রাইস ডটকমের তথ্যানুসারে, ১৯৭০ সালের সংকটের সময় সোনার দর আউন্সপ্রতি ৩৫ ডলার বেড়ে ৫২৫ ডলার হয়েছিল; ১৯৮০ সালে সেই দর বেড়ে দাঁড়ায় ৬১৫ ডলার। ১৯৯০ সালে সেটি অনেকটা কমে ৩৮৩ ডলারে নেমেছিল।

কিন্তু ২০০৮ সালে আবার অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে ওই বছর সোনার দাম অনেকটা বেড়ে যায়। তখন দাম ওঠে ১ হাজার ৯০০ ডলারে। মাঝে অবশ্য ২০১৫ সালের দিকে সোনার দাম ১ হাজার ৪৯ ডলারে নেমে এলেও বেশি দিন সেই দামে থাকেনি। এর পর থেকে দাম কেবল বাড়ছেই।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় সোনার প্রতি আকর্ষণ কিছুটা কমেছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু এখন ফেড আবার নীতি সুদহার কমাবে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় আবারও বাড়তে শুরু করেছে সোনার দাম।