Thank you for trying Sticky AMP!!

চীনের সংকট কেন অস্ট্রেলিয়ার মাথাব্যথার কারণ হয়েছে

চীন

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সময় ভালো যাচ্ছে না। সিংহভাগ পশ্চিমা দেশ এখন তাইওয়ানের বিষয়ে চীনের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চিন্তিত। তবে চীনের সামনে এখন আরও বড় বিপদ দেখা দিয়েছে।

চীনের এই বিপদ হলো নিজের অর্থনীতি নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির আবাসন খাত একসময় জাতীয় অর্থনীতির চালিকা শক্তি হলেও এখন যেন রীতিমতো ধসে পড়ছে। পূর্বাভাস আছে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

চীনের আবাসন খাতের ধীরগতির প্রভাব অর্থনীতির অন্য খাতেও পড়ছে। এতে দেশটির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। অর্থনীতির মৌলিক কাঠামোগত সমস্যা উন্মোচিত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে এখন আর কেবল প্রণোদনা দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না।

অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের পার্থক্য কোনোভাবেই আর চোখ এড়াচ্ছে না। গত বছর বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, চীন সেখানে উল্টো মূল্যহ্রাসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। জুন মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার শূন্যে নেমে এসেছে। ফলে চীন মন্দা এড়াতে পারবে, এমন আশাও এখন তিরোহিত হচ্ছে।

সরকারি পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দ্রুতগতিতে কমছে, এমনকি কোনো কোনো মানদণ্ডে তা নেতিবাচক।

চীনের দ্বিতীয় সারির শহরগুলোতেই বেশি সমস্যা হচ্ছে। দেশটির জাতীয় নিরীক্ষা কার্যালয় দেখেছে, এসব জায়গার স্থানীয় সরকারগুলো রাজস্ব আয় বাড়িয়ে দেখিয়ে অর্থ ভিন্ন খাতে স্থানান্তর করছে। স্থানীয় সরকার সাধারণত রাজস্ব আয়ের জন্য জমি বিক্রয়ের ওপর নির্ভরশীল।

তবে দেশটির বিভিন্ন স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর বেরোচ্ছে যে স্থানীয় পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন কর্তনের পাশাপাশি বেতন পেতেও বিলম্ব হচ্ছে। ফলে সরকারি পরিসংখ্যানে যা দেখা যাচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়েও সঙিন।

চীন এখন বাজেট ঘাটতির মুখে। বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএসের হিসাব, চলতি বছরের জানুয়ারি-মে সময়ে রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম হয়েছে।

দেশটির আবাসন খাতের মহিরুহ কোম্পানি এভারগ্রান্ডের দুরবস্থার মধ্য দিয়েই চীনের আবাসন খাতের দুর্গতির শুরু। গত দুই বছরে এই কোম্পানির ক্ষতি হয়েছে ৮১ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এখানেই শেষ নয়, এভারগ্রান্ডের মোট ঋণের পরিমাণ এখন ৩৩৪ বিলিয়ন বা ৩৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার, চীনের অর্থনীতির যা প্রায় ২ শতাংশ।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং করপোরেশন বা এএনজেডের তথ্যানুসারে, চীনের ডেভেলপার কোম্পানিগুলোকে আগামী কয়েক মাসে ১২ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৮০ কোটি ডলার আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে তাঁদের ঋণ ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার; সেই ঋণও তাঁদের পরিশোধ করতে হবে আগামী কয়েক মাসে।

এএনজেডের চীন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বেটি ওয়াং মনে করেন, চীনের আবাসন খাত এর আগে কখনোই এত দীর্ঘ সময় নিম্নমুখী ধারায় ছিল না, যদিও এভারগ্রান্ড সংকটের পর সরকার এই খাতকে বিপুল সহায়তা করেছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, এই খাত ছয় মাসের মধ্যে সংকট কাটিয়ে ওঠে। কিন্তু এবার প্রায় দুই বছর ধরে চলছে এই সংকট।

এখন কথা হচ্ছে, চীনের অর্থনীতি বা আবাসন খাতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার কী সম্পর্ক। অস্ট্রেলিয়া বিপুল পরিমাণে ইস্পাত উৎপাদন করে। চীনের ইস্পাত চাহিদার ৪০ শতাংশই জোগান দেয় অস্ট্রেলিয়া। ইস্পাতের সঙ্গে লোহার আকরিক ও কয়লার চাহিদাও সম্পৃক্ত, অস্ট্রেলিয়ার এই দুটি রপ্তানি পণ্যের দাম কমছে।

চীনের নির্মাণ খাত কতটা সংকুচিত হয়েছে, তা বুঝতে আরেক পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। গত বছর মেঝের আয়তনের হিসাবে দেশটির নবনির্মিত ভবনের পরিমাণ ৩৯ শতাংশ কমেছে। এখানেই শেষ নয়, বছরের প্রথম পাঁচ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নবনির্মিত ভবনের মেঝের আয়তন আরও ২২ শতাংশ কমেছে।  

এই বাস্তবতায় অস্ট্রেলিয়ার খনি কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়েছে। বিএইচপি বলেছে, যদিও উৎপাদন বেড়েছে, তবে বাড়তি আকরিক বন্দরে ফেলে রাখতে হচ্ছে।

চীনের এই বিপদের কারণ হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকেই দায়ী করা হচ্ছে। দেশটির প্রযুক্তি খাতের মতো আবাসন খাতের বিষয়েও খড়্গহস্ত তিনি। ২০১৭ সালে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে তিনি বলেন, বাড়ি মানুষের থাকার জন্য, ফাটকাবাজির জন্য নয়।

এরপর আবাসন খাতের রাশ টানতে একের পর পর বিধিবিধান করা হয়েছে। কিছু কিছু বিধি ক্রমবর্ধমান ঋণের রাশ কিছুটা টানতে পেরেছে ঠিক, কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেশটির আবাসন খাতের পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এখন সেই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে কীভাবে চীন বেরিয়ে আসবে, সেটাই আলোচনার বিষয়।