Thank you for trying Sticky AMP!!

এবার বেশি দামে কয়লা কেনার অভিযোগ আদানির বিরুদ্ধে

গৌতম আদানি

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গোষ্ঠীর। এবার তাদের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ, তারা বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি দামে কয়লা আমদানির নথিপত্র দেখিয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে এবং বড় অঙ্কের মুনাফা করেছে।

লন্ডনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে এই কয়লা আমদানির নথিপত্র হাতে এসেছে। সেই নথিপত্র বিশ্লেষণ করে তারা বলছে, আদানির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে যে বেশি দামে কয়লা আমদানির অভিযোগ আছে, এসব নথিপত্রে তার সত্যতা মিলেছে। বেশি দামে কয়লা আমদানি করে আদানি গোষ্ঠী বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। ফলে ভারতের সাধারণ নাগরিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হয়েছে।

‘আদানির দ্বিগুণ দামে কয়লা আমদানির রহস্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গত দুই বছরে আদানি গোষ্ঠী বিদেশ থেকে ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের কয়লা বাজারদরের তুলনায় দ্বিগুণ দামে আমদানি করেছে। বিদেশি একটি সংস্থার মাধ্যমে এই কয়লা আমদানি করা হয়েছিল। ওই সংস্থার আবার অন্যতম অংশীদার তাইওয়ানের এক ব্যবসায়ী। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস সম্প্রতি সেই ব্যবসায়ীকে আদানি গোষ্ঠীর অন্যতম গোপন অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

২০১৯ থেকে ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে আদানি গোষ্ঠীর আমদানি করা ৩০ জাহাজ কয়লার নথিপত্র খতিয়ে দেখা হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, রপ্তানি ঘোষণায় কয়লার যে দাম দেখানো হয়েছে, আমদানি রেকর্ডে দাম তার চেয়ে অনেক বেশি। এই সময় সম্মিলিতভাবে এসব জাহাজের আমদানি মূল্য ৭০ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ডলার বেড়ে গেছে, যার কোনো ব্যাখ্যা নেই।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার কালিওরং থেকে ৭৪ হাজার ৮২০ টন কয়লা নিয়ে একটি জাহাজ ভারতে আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দিকে রওনা হয়। জাহাজ ছাড়ার সময় কয়লার রপ্তানি মূল্য ছিল ১৯ লাখ ডলার, তার সঙ্গে যোগ হয় ৪২ হাজার ডলার পরিবহন ও বিমার খরচ। আদানি পরিচালিত গুজরাটের মুন্দ্রায় সেই কয়লা পৌঁছানোর সময় আমদানি মূল্য দেখানো হয় ৪৩ লাখ ডলার।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এর আগে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব গোয়েন্দাদের তদন্তেও একই চিত্র উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠী বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্র কিনছে। তবে তারা সরাসরি বিদেশের উৎপাদনকারীর কাছ থেকে তা কেনে না, মাঝখানে থাকে একটি মধ্যস্থতাকারী কোম্পানি। সেই কোম্পানি বাজারদরে যন্ত্রাংশ কিনে আদানির কাছে বিক্রি করে। কিন্তু ঘটনা হলো, সেই মধ্যস্থতাকারী কোম্পানি বাস্তবে আদানিদেরই মালিকানাধীন। তারা বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির হাত ঘুরিয়ে সেই অর্থ ভারতে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। উল্টো দিকে বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রাংশ কিনতে হচ্ছে বলে আদানিদের বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

এর আগে গুজরাট কংগ্রেস অভিযোগ করেছিল, আদানি গোষ্ঠী গুজরাটে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বড় অঙ্কের মুনাফা করছে। সে কারণে গুজরাটের মানুষকে বেশি দাম দিতে হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে, যার সূত্রপাত হয় হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে।

হিনডেনবার্গের অভিযোগ ছিল, জেদের শেয়ার ঘুরপথে কিনে দাম বাড়াত আদানি গোষ্ঠী, অর্থাৎ শেয়ার জালিয়াতি করত। গৌতম আদানি ওই অভিযোগ নাকচ করে দিলেও এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্ত চলাকালে ওসিসিআরপির আরেক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, আদানি পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজন বছরের পর বছর ধরে গোপনে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কিনেছেন। ঠিক সেই সময় উল্কার গতিতে আদানির উত্থান হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চও একই অভিযোগ তুলেছিল, যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল আদানি গোষ্ঠী। সেই প্রতিবেদনের জেরে অবশ্য গ্রুপটির বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে যায়। ব্যক্তিগত সম্পদ হারান গৌতম আদানিও।