Thank you for trying Sticky AMP!!

চীনের একটি কারখানায় কাজ করছেন একজন শ্রমিক

চীনে কারখানার উৎপাদন কমছে, বিপাকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এরপর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। তবে চীন বেশ দ্রুত উহানে কঠোর লকডাউন জারি করে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনে, যখন অন্যরা কেবল লকডাউন দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, সারা বিশ্ব যেখানে ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করা শিখে গেছে, সেখানে চীনে আবার বাড়ছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ।

তিন বছর ধরে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে একবার লকডাউন দেওয়া হচ্ছে, আবার কিছুদিন পরই তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন চীনে কর্মরত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি আইফোন কারখানার শ্রমিক বিক্ষোভের ছবি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকদের এই লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ ক্রমেই নাগরিক বিক্ষোভে রূপান্তরিত হচ্ছে। এর কিছুদিন আগেই খবর আসে, চীনের কারখানায় আইফোনের উৎপাদন কমে গেছে। সে জন্য সারা বিশ্বেই চাহিদার সাপেক্ষে জোগান নিশ্চিত করতে পারছে না অ্যাপল। খবর বিবিসির।

কারখানা বন্ধ রাখার জেরে নভেম্বর মাসে দেশটির পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স(পিএমআই) কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮, অক্টোবর মাসে যা ছিল ৪৯ দশমিক ২। একই সঙ্গে ব্যবসার পরিবেশও দুর্বল হয়েছে, সেবা ও নির্মাণ খাতের পরিবেশে সূচক অক্টোবর মাসে যেখানে ছিল ৪৮ দশমিক ৭, নভেম্বর মাসে তা নেমে এসেছে ৪৬ দশমিক ৭-এ।  

Also Read: চীনে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভে হাজারো মানুষ

১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে নিজেদের বাজার উন্মুক্ত করে চীন। এরপর মুক্তবাজার অর্থনীতি ও নব্য উদারনীতিবাদী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে চীন একসময় বিশ্বের কারখানা হয়ে ওঠে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও চীনে কাজ করে স্বস্তি পান বলেই সেখানে ছুটে যান। কিন্তু সেই বাস্তবতা আর নেই। ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিভেন লিঞ্চ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে চীন ব্যবসা করছি, কিন্তু সেখানে কখনো এমন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখিনি, এ সবকিছুই ঘটছে চীনা সরকারের শূন্য করোনা নীতির কারণে মানুষের মধ্যে সৃষ্ট ক্লান্তি থেকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে মানুষের মনোভাব কখনো এতটা খারাপ দেখিনি।’

বিষয়টি হচ্ছে, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভালো নয়, কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, বিনিয়োগকারীরা করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সম্প্রতি দেশটিতে দৈনিক ৪০ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন-রেকর্ড সংক্রমণ। সারা বিশ্ব যেখানে ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করা শিখে গেছে, সেখানে চীন এখনো শূন্য করোনা নীতিতে চলছে।

Also Read: চীনে বিক্ষোভকারীদের খুঁজে খুঁজে বের করছে পুলিশ

চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সে দেশে আবার হুহু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বাড়ছে আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর আঙুল উঠেছিল চীনের দিকেই, আর তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল নানা বিতর্ক। আর সেই কারণেই এবার চীন একটু বেশি সতর্ক; যেন আড়াই বছর আগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আর না হয়।

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নতুন করে বাড়তেই চীনের বিভিন্ন এলাকায় কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে দীর্ঘ নিভৃতবাস ও করোনা পরীক্ষার কড়াকড়ি।

করোনা যাতে কোনোভাবেই ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে লক্ষ্যে দেশজুড়ে শূন্য করোনা নীতির পথে হাঁটছে সি চিন পিং সরকার। দেশজুড়ে কড়া করোনাবিধির জন্য ঘরবন্দী সে দেশের বহু মানুষ। দৈনন্দিন কাজ করতেও অনুমতি নিতে হচ্ছে মানুষকে-কখনো অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে, আবার কখনো স্রেফ ‘না’ বলে ঘরের মধ্যেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

অর্থাৎ, সংক্রমণ যত বাড়বে, ততই কঠোর সামাজিক দূরত্বের নীতির দিকে ঝুঁকবে চীন। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উৎপাদকেরা প্রমাদ গুনছেন। তবে চীন বিশাল বাজার, এই বাজার সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ছাড়তে চান না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কমার্স আন্ডার সেক্রেটারি ফ্রাঙ্ক লেভিন বিবিসিকে বলেন, ‘এত বাধা সত্ত্বেও চীনে অনেক কোম্পানি ভালো ব্যবসা করছে, যেমন স্টার বাকস, নাইক ও মার্সিডিজ। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে এই কোম্পানিগুলোর বিকল্প পরিকল্পনা আছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর; কারণ, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনা থাকে না। বিষয়টা হচ্ছে, যে পরিকল্পনা দিয়ে আপনি দেশে ভালো ব্যবসা করতে পারবেন, তা দিয়ে যে বিদেশেও ভালো ব্যবসা করতে পারবেন, তার নিশ্চয়তা নেই।’

চীনের উত্থানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভূমিকাই প্রধান। কিন্তু সাম্প্রতিক বাণিজ্যযুদ্ধের পর পশ্চিমা কোম্পানিগুলো চীন ত্যাগের পরিকল্পনা করছে, আবার সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের শূন্য করোনা নীতি; ফলে চীন যে এখন খুব ভালো অবস্থায় নেই, তা বলাই বাহুল্য। ভিয়েতনাম, ভারতসহ অনেক দেশ পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর চীন ত্যাগ নীতির সুবিধা নিতে তৎপর।

Also Read: রিজার্ভে শীর্ষে চীন, সংকটে শ্রীলঙ্কা, আর্জেন্টিনা