Thank you for trying Sticky AMP!!

চীন ও ভারতের পতাকা

কেন ভারতীয় শেয়ার ছেড়ে আবার চীনের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা

ভারতীয় শেয়ার কিনুন, বিক্রি করুন চীনা শেয়ার—ভারতের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের এই কৌশল এক সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে।

ভারতের শেয়ারবাজার কয়েক বছর ধরেই ভালো করছে, সেই তুলনায় চীনের শেয়ারবাজার অতটা ভালো অবস্থায় ছিল না। এই বাস্তবতায় অনেক বিনিয়োগকারী ভারতের শেয়ারবাজারে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু সেই ধারার অবসান হতে শুরু করেছে।

ব্লুমবার্গের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, চীন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে, সে কারণে বিনিয়োগকারীরা তাদের পুরোনো প্রিয় বাজার চীনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। তাঁদের মনে আশাবাদ, অর্থনীতি চাঙা করতে বেইজিং যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তাতে চীনের শিল্প খাতের মুনাফা বাড়বে, উৎপাদনও বাড়বে।

বিনিয়োগকারীদের এই প্রবণতায় বোঝা যাচ্ছে, চীনের বাজারের বিষয়ে তাঁরা ক্রমেই আরও আশাবাদী হয়ে উঠছেন। ওয়াল স্ট্রিটের বড় ব্যাংকগুলো এখনো মনে করে, আগামী এক দশক বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার হবে ভারতের শেয়ারবাজার, যদিও বিনিয়োগকারীরা এ বিষয়ে সতর্ক যে ভারতের বাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির স্টক অতিমূল্যায়ন হচ্ছে। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে।

তহবিল ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ল্যাজার্ড অ্যাসেটের উদীয়মান বাজার বিভাগের প্রধান জেমস ডোনাল্ড বলেছেন, চীনের বাজারে শেয়ারের দাম কমতির দিকে থাকলেও সেখানে বিনিয়োগের যৌক্তিকতা বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘চীনে ল্যাজার্ড অ্যাসেটের যে স্টক আছে, তা বাজারের সূচকের সঙ্গে সম্পর্কিত, কিন্তু ভারতের বাজারে স্টকের অতিমূল্যায়নের কারণে আমাদের স্টক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

বিনিয়োগ যে চীনে সরে যাচ্ছে, তার লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে। যদিও অনেকে মনে করছেন, বিষয়টি নিছক কৌশলগত। ভারতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইতিবাচক পূর্বাভাস ও নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে মনে করছেন, বিনিয়োগ আবার ভারতে ফিরবে।

সংবাদে বলা হয়েছে, উদীয়মান দেশের তহবিল এখন ক্রমবর্ধমান হারে চীনের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে। একই সময়ে ভারতের বাজারে তাঁরা বিনিয়োগ কমাচ্ছেন। বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা মূলত হংকংয়ের সূত্রে চীনের স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করছেন। গত বছরের জুন-জুলাই মাসের পর এই প্রথম এই প্রবণতা আবার দৃশ্যমান হচ্ছে।

ভারতের শেয়ার সূচকের উত্থান কিছুটা কমে গেলেও গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর এমএসসিআই চায়না ইনডেক্স বা সূচক গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এই বাস্তবতায় উদীয়মান দেশগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো এখন ভারতের বাজার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে চীনের বাজারে নিতে শুরু করেছেন।

মার্চ মাসে চীনের উৎপাদন কার্যক্রম গত ১৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে। এক বেসরকারি জরিপে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে আত্মবিশ্বাস ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। দেশটির ভেতরে ও বাইরে থেকে ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনে গতি এসেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের কাইজিন/এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই মার্চ মাসে ৫১ দশমিক ১ পয়েন্ট উঠেছে, যদিও বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, এই সূচকের মান থাকবে ৫১। আগের মাস মার্চে এই সূচকের মান ছিল ৫০ দশমিক ৯। এ নিয়ে টানা পাঁচ মাস চীনের উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশটির উৎপাদন কাতের এই গতি বৃদ্ধিও বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।

চলতি অর্থবছরে ভারতের শেয়ারবাজার সামগ্রিকভাবে ভালো করেছে। এ সময় অনিশ্চয়তায় জর্জরিত ছিল বিশ্ব অর্থনীতি, ভারতের অবস্থাও খুব ভালো ছিল তা নয়। নানা কারণে অস্থির সময় পার করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবু গত অর্থবছরে (এপ্রিল ২০২৩-মার্চ ২০২৩) ভারতের বাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্স বেড়েছে ১৪ হাজার ৬৫৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। গত বৃহস্পতিবার অর্থ বর্ষের শেষ লেনদেনে তা ছিল ৭৩ হাজার ৬৫১ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট। আরেক সূচক নিফটির উত্থান হয়েছে মোট ৪ হাজার ৯৬৭ দশমিক ১৫ পয়েন্ট। এই সূচক বছর শেষ করেছে ২২ হাজার ৩২৬ দশমিক ৯০ পয়েন্টে। গত ৭ মার্চ ৭৪ হাজার ১১৯ দশমিক ৩৯-এ থেমে সর্বকালীন উচ্চতা স্পর্শ করে সেনসেক্স—রেকর্ড গড়ে নিফটি ওঠে ২২ হাজার ৪৯৩ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, আগামী অর্থবছরও (২০২৪-২৫) ভালো কাটবে। তবে অনেক কিছুই নির্ভর করছে মূল্যস্ফীতি ও সুদের হারের ওপর—বিনিয়োগকারীদের নজর আসন্ন লোকসভা ভোটের দিকেও।