Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রেক্সিটের কারণেও যুক্তরাজ্যে খাবারের দাম বাড়ছে

সীমান্তে নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। সে কারণে বাড়ছে খাদ্যের দাম।

যুক্তরাজ্যে নভেম্বর মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আবারও দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছে।ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে গত মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।

শুধু ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটিশ পরিবারগুলোর খাদ্যব্যয় গত দুই বছরে গড়ে ২১০ পাউন্ড বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার পর সীমান্তে যেসব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার জেরে পণ্যের দাম বেড়েছে। দেশটিতে কয়েক মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের (এলএসই) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

এত দিন মূলত রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে বলে বিশ্লেষকেরা বলে আসছিলেন। কিন্তু দেশটির দুর্দশা যে ব্রেক্সিট থেকে শুরু হয়েছে, তা এত দিন আলোচনার বাইরে ছিল। এলএসইর এ গবেষণা এবার সেখানে আলো ফেলল।

দ্য গার্ডিয়ান–এর সংবাদে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের প্রায় দুই বছরের বেশি সময়ে দেশটির নাগরিকদের খাদ্যব্যয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। বিষয়টি হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার কারণে এখন আর আগের মতো নির্বিঘ্নে পণ্য পারাপার হতে পারে না। সীমান্তে নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। সে কারণে বাড়ছে খাদ্যের দাম। স্বাভাবিকভাবেই দুই অঙ্কের ঘরের খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ইইউ ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক সম্পর্কে গভীর পরিবর্তন এসেছে। আন্তসীমান্ত বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
রিচার্ড ডেভিস, অধ্যাপক, ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি

ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটিশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় বেড়েছে, যার সিংহভাগ ভোক্তাদের বহন করতে হচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ইইউ থেকে বেরিয়ে আসায় ব্যয়ের ৫০ থেকে ৮৮ শতাংশ ভোক্তাদের বহন করতে হয়েছে। ফলে বছরে খাদ্যব্যয় ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর ভোক্তাদের মোট ৫৮০ কোটি পাউন্ড অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে।

ব্রেক্সিটের কারণে দেশটির দরিদ্র পরিবারের জন্য উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাদ্যব্যয় বেড়েছে। বিষয়টি হচ্ছে, এ ধরনের খাদ্য ক্রয়ে ধনীর তালিকায় শীর্ষ ১০টি পরিবারের ব্যয় দশমিক ৭ শতাংশ, যেখানে দরিদ্র পরিবারগুলোর ব্যয় ১ দশমিক ১ শতাংশ। বিষয়টি হচ্ছে, দরিদ্র পরিবারের আনুপাতিক খাদ্যব্যয় ধনী বা সচ্ছল পরিবারের চেয়ে বেশি। সে জন্য উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে সবচেয়ে ভুক্তভোগী হয় দরিদ্র পরিবারগুলো।

বছর দুয়েক আগে ইউরোপীয় জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে যুক্তরাজ্য। ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন ‘ইউরোপীয় ইকোনমিক কমিউনিটি’-তে যোগ দিয়েছিল যুক্তরাজ্য, যা ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চেহারা নেয়। দীর্ঘ সেই ৪৭ বছরের সম্পর্ক ত্যাগ করে ২০২০ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি নতুন সূচনার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কার্যত তার পরেই মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। করোনার মধ্যে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুক্তরাজ্য—জিডিপি সংকোচন হয় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। মাঝে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলতি বছর দেশটির অর্থনীতি আবারও সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছেই।

গবেষণার সহলেখক ও ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রিচার্ড ডেভিস বলেন, ইইউ ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক সম্পর্কে গভীর পরিবর্তন এসেছে। আন্তসীমান্ত বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। তাঁর মত, এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক—কোনো দিক থেকেই ভালো অবস্থায় নেই যুক্তরাজ্য। চলতি বছর তিনজন প্রধানমন্ত্রী দেশটি শাসন করেছেন। বরিস জনসন পদত্যাগের পর দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বসেছিলেন লিজ ট্রাস। ৪৫ দিনের মাথায়ই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী হন ঋষি সুনাক। এমন ডামাডোলের মধ্যে ব্রিটেনকে খোঁচা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে’র মতো করেই ইইউর শিল্প দপ্তরের প্রধান থিয়েরি ব্রিটন বলেছেন, ‘ইউরোপ ছাড়া গতি নেই ব্রিটেনের!’

বাস্তবতা হচ্ছে, নভেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আবারও দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছে। ডিম ও দুগ্ধজাত খাবারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে গত মাসে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে আবার তাজা খাবারের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি—১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের মাস অক্টোবরে ছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

এদিকে ওইসিডির পূর্বাভাস, জি–৭–ভুক্ত দেশগুলো, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপানের অর্থনীতি আগামী বছর দুর্বল হবে। তবে এদের মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্য ও জার্মানির অর্থনীতি সংকুচিত হবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকুচিত হবে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে তাদের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।