Thank you for trying Sticky AMP!!

পাঁচ বছর আটকে নিয়োগপ্রক্রিয়া

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া পাঁচ বছর ধরে আটকে আছে। লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলেও এ–সংক্রান্ত রিট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। এ পদে যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের অনেকের সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিনেও নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাছাই পরীক্ষা ও জুন মাসে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে ৪৫৬ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ফল প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

দীর্ঘদিনেও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ না করায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে কয়েকবার যোগাযোগ করেন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। কিন্তু বারবার হতাশ হয়ে ফিরেছেন তাঁরা। নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা।

হাসিবুর রহমান নামের একজন প্রার্থী বলেন, ২০১৮ সালের সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পিটিআই–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ না করায় কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বিভাগীয় প্রার্থীর কোটা–সুবিধা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের কারণে পিএসসি মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে না। মাত্র কয়েকজন শিক্ষকের রিটের কারণে সারা দেশের প্রাথমিকের শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রিট–সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে রিট নিষ্পত্তি করা হোক অথবা রিটকারী শিক্ষকদের মধ্যে যে কয়েকজন ইনস্ট্রাক্টর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন, সেই কয়েকটি পদ সংরক্ষণ করে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হোক।

রাইসুল ইসলাম নামের আরেকজন প্রার্থী বলেন, ‘আমরা যাঁর কাছেই যাই, তাঁরা অন্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন। পিএসসিতে গেলে বলে মন্ত্রণালয়ে যান। আর মন্ত্রণালয়ে গেলে বলে আদালতে যান। আমরা আদালতে গিয়ে এই মামলার অ্যাডেড পার্টি হয়েছি। কিন্তু এটার বিবাদী তো সরকার অর্থাৎ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা মামলা নিয়ে সিরিয়াস নয়। আর প্রাথমিকের যেসব শিক্ষক মামলা করেছেন, তাঁরাও ইচ্ছা করে শুনানিতে আসেন না। লিখিত উত্তীর্ণ হয়েও মৌখিক পরীক্ষা দিতে না পেরে হতাশ। আমরা আর যাব কোথায়?’

বর্তমানে সারা দেশে ৬৭টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পিটিআইগুলোতে ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স করানো হয়। যেটির মেয়াদ ১৮ মাস। প্রাথমিক ও প্রাক্-প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এই প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। দেশে বর্তমানে ৬৭টি পিটিআই রয়েছে। প্রতিটি পিটিআইয়ে ইনস্ট্রাক্টরের পদ ১৭টি। এর মধ্যে সাধারণ ইনস্ট্রাক্টরের পদ ১২টি। কিন্তু বর্তমানে একেকটি পিটিআইয়ে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়জন সাধারণ ইনস্ট্রাক্টর আছেন। তাই পর্যাপ্ত ইনস্ট্রাক্টর না থাকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

চলতি নভেম্বর মাসে প্রাথমিকে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে। ইনস্ট্রাক্টরের অভাবে প্রাথমিকের নতুন এই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থমকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা।

প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ঢাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ৬৭টি পিটিআইয়ে বর্তমানে মাত্র ৫৫০ জন ইনস্ট্রাক্টর আছেন। যেখানে থাকার কথা ১ হাজার ১৩৯ জন। আগামী ডিসেম্বরে আরও অনেকে অবসরে যাবেন। এতে পিটিআইগুলো ভয়াবহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। প্রাথমিকে নতুন সহকারী শিক্ষকেরা নিয়োগ পাওয়ার পর তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। পর্যাপ্ত ইনস্ট্রাক্টর না থাকলে মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ ইনস্ট্রাক্টরের এই নিয়োগ নিয়ে তিনটি মামলা চলমান। মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হলে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব নয়। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে যোগাযোগ করা হলে পিএসসির পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমরা পরীক্ষা নিতে পারছি না। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’